* সুতরাং বাস-ট্রেন-লঞ্ছ বা বিমানে আপনার পাশে জঠ বাঁধা ঝাঁকড়া চুলে আবৃত ময়লা-নোংরা পোষাক পরা যে মানুষটি বসে আছে !
……………………………………………………………………
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই জন্মগত ভাবে একটি মৌলিক মর্যাদার অধিকারি – যা মহান স্রষ্টা আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত। প্রতিটি মানুষই তার নিজস্ব সত্ত্বা , করন কৌশল এবং কর্ম দক্ষতা নিয়ে একজন বড় মানুষ – আশরাফুল মাখলুকাত । তাই কাউকে বড়-ছোট ভেবে আত্মতৃপ্তি পাওয়ার কোন সুযোগ নেই এবং সেটা হবে নিজেকে একজন মার্জিত ইতর প্রজাতি হিসেবে আত্ম স্বীকৃতি প্রদান করা ! সুইপার থেকে সমর নায়ক , বুদ্ধি প্রতিবন্দী থেকে বুদ্ধিজীবি সবার ক্ষেত্রেই অ্তি সরল ও সার্বজনীন ভাবে এটা প্রযোজ্য । মাও সেতুং বলেছেন ‘ আমাদের দেশে যারা বুদ্ধিজীবি বলে দাবি করে তারা আসলে আধা বুদ্ধিজীবি – কারন তারা জানেনা কিভাবে লাঙল দিয়ে ভুমির সাথে লড়াই করে ফসল ফলাতে হয় ! কিভাবে কাস্তে দিয়ে সে ফসল কাটতে হয় ! হাতুড়ি-শাবল-গাঁইতি চালিয়ে কিভাবে শিল্প সভ্যতা গড়ার রক্ত ঘাম ঝরাতে হয়!
শরৎ বাবুর শ্রীকান্ত উপন্যাসের সাহেব আর মাঝির গদ্য কাব্যটি (ষোল আনাই মিছে !) অন্তত পাঠ্য বইয়ে পড়েন নাই – এমন শিক্ষিত লোক বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবেনা। যেখানে দেখানো হয়েছে খেয়া পার করা সরল সাধারন নিরক্ষর মাঝিকে কি নিদারুন ভবে কেতা দুরস্ত বাবু সাহেব তার বিভিন্ন বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অহমিকা দেখিয়ে জ্ঞানহীন ছোট লোক বলে তিরস্কার করছে এবং বলছে তোমার জীবন বার আনাই মিছে ! ঠিক সেই সময় মাঝ দরিয়ায় ঝড় উঠার পর বাবু সাহেব ভয়ে হাউ মাউ করে কেঁদে যখন বার বার মাঝির দয়া ও সাহায্য ভিক্ষা করছিল – তখন মাঝি জিজ্ঞেস করলো ‘বাবু সাহেব – আপনি সাঁতার জানেন ? বাবুর না উত্তর শুনে মাঝি অতি বিনয় ও ভদ্র ভাবে বল্লেন –তাহলে তো আপনার জীবন ষোল আনাই মিছে !’ এবং নৌকাডুবির পর বাবুকে কাঁধে নিয়ে সাঁতরিয়ে নিরাপদে তীরে তুলে বাঁচিয়ে দিলেন !
সুতরাং বাস-ট্রেন-লঞ্ছ বা বিমানে আপনার পাশে জঠ বাঁধা ঝাঁকড়া চুলে আবৃত ময়লা-নোংরা পোষাক পরা যে মানুষটি বসে আছে –করিবেননা অবহেলা তাঁকে ! হতে পারে তিনিও আপনার ছেয়ে অনেক বেশী যোগ্য একজন ব্যক্তি – হতে পারেন তিনি একজন মহাজ্ঞানী , মহাজন এবং দার্শনিক !
শরৎ বাবু নিজের বিনয় প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছিলেন –‘ সারাদিন আকাশের দিকে তাকাইয়া থাকি – তাকাইতে তাকাইতে ছোখ ব্যথা করিয়া ফেলি – কিছুই দেখিতে পাইনা – ওরা এত কিছু দেখে কোথ্থেকে!’
অথবা কবি গুরু সমালোচকদের উদ্দেশ্যে – আমিতো লেখার সময় এত কিছু ভাবিনি ! ওরা এত কিছু পায় কোথ্থেকে!’
অথবা কবি নজরুল ‘অমর কাব্য তোমরা লিখিও – যাহারা আছো সুখে ‘
সুতরাং ………………………………………………………!!!