তিন বছরের রাকিন আর ছবির ভালোবাসা
কঁদালো আমায় পদ্মার পাড়ে গতকাল*
…………………………………………….
ছবি তোলার আগে বিষয় বস্তুর সাথে নিজের সত্ত্বাকে বিলীন করে দেয়ার মত উদারতা এবং ক্ষমতা একজন পেশাজীবি আলোকচিত্রী এবং শিল্পীর বড় সাফল্য
To make empathy with the subject before photographing is a great success of a professional and creative photographer
ছেলেটির নাম রাকিন ৩ কি সাড়ে তিন বছর বয়স আর মেয়টির নাম ছবি – এরা যখন হামাগুড়ি দিয়ে চলতো তখন প্রথম এদের ছবি তুলেছিলাম – তার পর আরও বহুবার । তাদের জন্মের বহু আগে ( ২০- ২২ বছর) থেকেই এই এলাকা আমার ছবি তোলার এক অভয়ারন্য এবং আবাল-বৃদ্ধ-ভনিতার সাথে আমার প্রানের বন্ধন । ভাংগা-গড়ার খেলায় পারদর্শী পদ্মা নদীর একেবারে পাড় ঘেঁষে সবুজ বনানীর ছায়া ঘেরা বিশুদ্ধ বাতাসের প্রবাহে জীর্ন -শীর্ন এক গ্রামে এদের স্বর্গীয় আবাস।
গতকাল ৩১ মে ২০২১ সকাল ৮ঃ৩০ মিঃ আমি যখন এদের বাড়ির ঊঠানে দাঁড়িয়েছি তখন প্রথমেই পদ্মার বুক থেকে উঠে আসা প্রবল শীতল হাওয়া আমাকে উষ্ণ অভিবাদন জানায় ! এর মধ্যেই চোখে পড়ে যাই এক কিশোরের – সে চোখের পলকেই ছূটে গিয়ে খবর পৌঁছে দেয় আমাদের ছবি তোলার কাকা এসেছে সবাই আসো । মুহুর্তেই আমি নানা বয়সী মানুষের আবেগের বহিঃপ্রকাশে ঘেরাও হয়ে গেলাম – তবে এদের বেশীর ভাগই শিশু কিশোর – কত শত প্রশ্নের মুখোমুখি আমি ? এতদিন পরে আসলেন কেন , কেউ বলে পাকা আম খাবেন এবং নিয়ে যাবেন আবার কেউ বলে গাছের ডেউয়া ফল গুলো এখনও পাকে নাই এক সপ্তাহ পরে আবার আসবেন –
কিন্তুু সব ছাড়িয়ে যে দৃশ্যটি আমাকে অবাক করে আমার চোখকে অশ্রু সজল করে দিলো তা হলো সেই ৩ বছরের ছেলেটি যে অতি কষ্টে একটি প্লাষ্টিকের চেয়ার টেনে নিয়ে আমার দিকে আসছে – তার অবস্থা দেখে বড়রা অনকেই তাকে সাহায্য করতে গেল কিন্তু রাকিন কাউকেই সে চেয়ারখানা ধরতে দেয়নি – নিজেই শেষ পর্যন্ত চেয়ারখানা আমার পাশে রেখে বল্লো “বতো” (কথা গুলো তার স্পষ্ট হওয়ার কথা যা এখনও হয়নি ডাক্তার বলেছে আর একটু বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে ) তারপর সে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে বল্লো – আমার ছবি তোতো ! এর মধ্যেই একটি পাকা আম হাতে নিয়ে ছবি নামের ছোট মেয়েটি এসে হাযির; বলে ধর আমটি খাও এখন গাছ থেকে পড়ছে বাতাসে! আমি রাকিন আর ছবি মেয়েটির ছবি তুলছি আর হৃদয় দিয়ে অনুভব করছি মহা বিস্ময়কর এক আদিম আনকাোড়া অচেতন অনুভতির বহিঃপ্রকাশ – আবারো ছোখ আমার অশ্রুসজল – দৃষ্টি বার বার ফিরে ফিরে যেতে থাকে রাকিন আর ছবির জ্যোতির্ময় অবয়বে ! যেতে থাকবে বার বার চিরকাল ।! হৃদয় কাঁপিয়ে বেরিয়ে আসলো জমাট বাঁধা কথা গুলো ” হে ক্যামেরা-আলোকচিত্র আর মানুষ/বিষয় বস্তুর সাথে আলোকচিত্রীর আত্মার উদার আত্মীয়তার নিবিড় বন্ধন; তুমি কত শক্তিশালী ! কত স্বর্গীয়!”
01 june 21