জন্ম কাহন
জন্মেছিলাম কোন এক শুভ লগ্নে।অজ পাঁড়াগায়ের এক আদিম সুন্দর প্রকৃতির কোলে। কাদা মাটি গায়ে মেখে মেখে বেড়ে ওঠা।দল বল নিয়ে পুকুর খাল নদী সাঁতরিয়ে কদম্ব ফুলের মাতাল গন্ধে হারিয়ে যাওয়া !ঝুম বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হাডুডু খেলায় দুরন্ত শৈশবের অচেতন আনন্দের বন্যায় ভেসে যাওয়া !বনানীর পথ ধরে তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে পৌঁছে যাওয়া সব দুষ্টুমীর শেষ সীমানায় ।বাগানের আম জাম কাঁঠাল ডাব এবং নাম না জানা আরও কত রকম ফল পাড়ার খেলায় দস্যি দলের নেতাগিরি করে প্রতিবেশীর দৌড়ানি খেয়ে ছুট দৌড়ের পাল্লা শেষে ঘরে ফিরে মায়ের বকুনী আর বাবার পিটুনির প্রতিযোগিতা ! সে কি মজার অভিজ্ঞতা।
জন্ম তারিখটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হেড স্যারের দেয়া – সেই ষাটের দশকের শেষ প্রান্তে সমাপনী সনদ নিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ের পথে হাঁটার বেলায় ।
তার পর ৬৯এর গন আন্দোলন – অষ্টম শ্রেণীর কিশোর বালক দলবদ্ধ হয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহোদয়ের বাধা উপেক্ষা করে রাজপথে বড় ভাইদের মিছিলে – “তোমার দেশ আমার দেশ বাংলাদেশ বাংলাদেশ ঃ বাঁশের লাঠি তৈরী কর বাংলাদেশ স্বাধীন করো ঃ জেলের তালা ভাংগবো শেখ মুজিবকে আনব ঃ জয় বাংলা “ শ্লোগানে আকাশ বাতাস বিদীর্ন করা।ছাত্রলীগ নেতাদের সাথে ১৫ কিঃ মিঃ পায়ে হেটে আকাশের সমান উচ্চতার সদ্য কারামুক্ত বংগবন্ধু শেখ মুজিবকে এক নজর দেখতে যাওয়া। ৭০ এর নির্বাচনের বিজয় উল্লসিৎ তারুন্য জনতার ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া ।
তাঁর পর বংগবন্ধুর ডাকে মহান বীর বাংগালীর মহান মুক্তিযুদ্ধ । আমাদের তারুন্যের আকাশে উড়ছে তখন লাল সবুজ পতাকা আর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগী বাঙ্গালী নামের মীর জাফরদের গনহত্যা ও ধর্ষনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আগ্নেয়গিরির জলন্ত লাভা। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন ।যাই হউক আজকের লেখায় আর এদিকে এগোবনা কারন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সাথে আমাদের তারুন্যের স্মৃতি বৈচিত্র ও ভয়াবহ অভিজ্ঞতার যে মেল বন্ধন তা এই ক্ষুদ্র পরিসরে লেখা তো দূরে থাক শুরু করাই সম্ভব নয় !
সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে শেষ করলাম উচ্চ মাধ্যমিক সনদ পরীক্ষা ………
তার পর মনের অজান্তেই একদিন অবারিত সবুজ প্রান্তর ,সী্মাহীন নীলিমা আর এক ঝাঁক প্রিয় ছোখের তারায় অঝোর ধারায় অশ্রু বর্ষন করে চলে এলাম শহরের খাঁচায় !সে খাঁচায় চলছে জীবন সংগ্রাম সাফল্য –ব্যর্থতা , আনন্দ – বেদনা আর অনবদ্য সৃষ্টির মোহনায় মাতাল তরঙ্গের তালে তালে অতল সমুদ্রের পথে ……।।
হে আলোকচিত্র শিল্প তুমি মোরে করেছো মহান … তোমার মাঝে খুঁজে ফিরি আমি অসীমের আহবান … আমার বিশ্বাসে আর শেষ নিঃশ্বাসে তুমি চির অম্লান ……।
•আজকে আমার জন্মদিবস এবং সাথে সাথে আমার নস্টালজিক প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সেই প্রিয় অভিভাবক হেড স্যার কে (যিনি আমাদের রসের ছলে বলতেন – আজকে যদি হো্ম ওয়ার্ক না করার জন্য চীনা বেতের ২০টা বাড়ি খাওয়া থেকে রেহাই পেতে চাও তাহলে ঐ যে ছম ছম ওয়ালা যাচ্ছে তার থেকে ছম ছম এনে আমাকে খাওয়াও – শুরু হত তখন আমাদের ছুট দৌড়ের পাল্লা ) … স্মরন করার সৌভাগ্যটি যাঁরা আমায় উপহার দিয়েছেন তাঁদের সবাইকে নিরন্তর সুভেচ্ছা ও অভিনন্দন – সবার শুভ্র সুন্দর সৃষ্টির মহামিলনে ধরনী হউক নান্দনিক এবং মানবিক …………।।
আমার আলো্কচিত্র সৃষ্টির চারন ভুমি – যেখানে আমি আলোকচিত্র বাউল গত ২৩ বছর ধরে একটানা ছবি তুলছি এবং যেখানকার মাটি-মানুষ-প্রকৃতি আমার শিল্প সত্ত্বার চিরন্তন আত্মীয় – ছন্দন পুর , সিঙ্গাইর মানিকগঞ্জ
১ জুলাই ২০২০
*যে ঘঠনাটি আমার জীবনের সোনালী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ অধ্যায় .. কাঁদাবে আমায় সুখানুভূতির পরশে !!……………………………………………………………………………………………।
আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই চলে গিয়েছিলাম শহর থেকে বেশ দূরে হারিয়ে গিয়েছিলাম আমার প্রিয় ঠিকানা সুদখীরা – চন্দনপুর (সিঙ্গাইর) গ্রামে যেখানকার মাটি – মানুষ আর উদার সুন্দর গ্রাম্য প্রকৃতি গত বিশ বছর ধরে মিশে আছে আমার আলোকচিত্রের ভুবনে আত্মার গহীনে ।।
আজ সকালে যেতেই ছেলে মেয়েরা যারা সব সময় ওখানে আমার সাথে থাকে , আমাকে সংগ দেয়, আমার সব ভালো মন্দ দেখা শুনা করে, ছবি তোলার আনন্দে মেতে উঠে ( গত বিশ বছরে ধারাবাহিকতায় এরা এখন আমার ২০তম সংগী ব্যাচ ) – তারা আমাকে চমকে দিয়ে বল্লো কাকা আজ আপনার জন্মদিন । আজ আমরা অন্য রকম এক আনন্দে মেতে উঠবো আপনার সাথে (এরা সবাই লেখা পড়া করে – যখন ২০ বছর আগে এই গ্রাম দুটিতে আসি তখন এখানে স্কুল ছিলোনা – লেখা পড়ার হার ছিল প্রায় শুন্যের কোঠায় – আজ এখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে এবং শিক্ষার হার প্রায় ৫০% ছাড়িয়ে গেছে _ যাই হউক সে গল্প অন্যদিন বলব ) এরপর ওদের সাথে গিয়ে বসলাম বিস্তীর্ন ফসলের মাঠের মাঝখানে গাছ-পালা ঘেরা একটি নিরজন বাগানে। তারপর একেকজন ছুটতে থাকলো একেক দিকে । কিছুক্ষনের মধ্যেই একটি কেক সহ আরো অনেক কিছু নিয়ে আসলো এবং কলা পাতা বিছিয়ে সব সাজিয়ে নিল । আশ পাশ থেকে দু এক জন বয়সী কৃষক (দধীচি) এসে আমাদের সাথে যোগ দিল ।। আমার সারা জীবনের বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দানুভূতির এই দূর্লভ অবিস্মরনীয় সময়টির বাকী পর্বটি আমরা আলোকচিত্রের ক্যানভাসে দেখি ……।।
# সার্বিক আয়োজন ও আলোকচিত্র ব্যবস্থাপনায় ঃ শাকিল ১৫ ।। আমার প্রিয় কমরেড – সিঙ্গাইর