*আলোকচিত্রাচার্য মনজুর আলম বেগ
আলোর ভূবনে কালজয়ী এক জ্যোতির্ময় জ্যোতিস্ক*
# আবদুল মালেক বাবুল এফবিপিএস ,এফবিপিএস (সন্মান)
……………………………………………………………………………………………..
*তিনি এ দেশে ফটোগ্রাফীর উন্নতির জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন বলা যেতে পারে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ফটোপ্রতিষ্ঠান দুটি, দেশের ফটোগ্রাফী শিখবার অসুবিধা যে অনেক খানি দূর করেছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। তা ছাড়া তাঁর ফটোগ্রাফী বইগুলি ও বহু প্রবন্ধ ফটোগ্রাফীর অগ্রগতির জন্য যথেষ্ট সহায়ক হয়েছে।
প্রীতিভাজন মনজুর আলম বেগ ফটোগ্রাফীতে তার অপূর্ব অবদানের জন্য বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের নিকট বরেণ্য এতে সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। আমি নিজেও তাঁর কাছে একটি বিষয়ে কৃতজ্ঞ। তিনি ‘ড্যাডি’ নামে আমায় আখ্যায়িত করে সারা বাংলাদেশের ফটোগ্রাফারদের ‘ড্যাডির’ আসনে আমায় অধিষ্ঠিত করেছেন।
# গোলাম কাশেম ড্যাডি
*মঞ্জুর আলম বেগ যেমন বিশ্বের ১১ জন শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্র ব্যক্তিত্ত্ব হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত তেমনি তিনি বংলা ভারত উপমহাদেশের জনপ্রিয় লেখক এবং গুণী শিক্ষক । তাঁর লেখা “ আধুনিক ফটোগ্রাফি “ বইটি উভয় বাংলার আলোকচিত্র পিপাসু মানুষের নিকট এক অমুল্য সম্পদ । বইটি পড়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল । এই কীর্তিমান মানুষটির সাথে দেখা হওয়ার আকাংখা থেকেই গেল ।
# বিশ্ব জয়ী সত্যজিৎ রায় – অস্কার পুরস্কার বিজয়ী গর্বিত বাঙ্গালী
সূ্ত্র ঃ ফটোগ্রাফিক এ্যসোসিয়েশন অব দমদমের আয়োজনে অনুষ্ঠেয় বিশ্বের ১১ জন শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্র ব্যক্তিত্ত্বদের মাঝে সনদ বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ , ২৩ জানুয়ারী ১৯৮৬ , হোটেল অবরয় গ্র্যান্ড , কোলকাতা । উল্লেখ্য তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি না পাওয়ায় উক্ত অনুষ্ঠানে বেগ স্যার উপস্থিত থাকতে পারেননি ।
………………………………………………………………………
*শিল্পকলায় যেমন জয়নুল আবেদীন করেছেন । একটা দেশকে এ ধরনের কোন শিল্পকলায় যদি জাগ্রত করতে হয় তাহলে কোন না কোন লিডার লাগে । সেই ফটোগ্রাফী্র লিডার যদি কাউকে বলি তাহলে আমি বলবো “ বেগ সাহেব ” ।
# কালজয়ী শিল্পী ব্যক্তিত্ত্ব ঃ মুস্তাফা মনোয়ার
স্বনির্বাচিত (বাংলাদেশ টেলিভিশন, ২৪-৯-৯৭)
………………………………………………………………………………………….
*শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন এম এ বেগ সম্পর্কে বলেছিলেন ‘ শিল্প জগতের দুটি ধারায় অবস্থান করলেও আমাদের মধ্যে রয়েছে এক চমৎকার অন্তমিল ’। বাংলাদেশে সুকুমার শিল্প চর্চা অনুশীলন ও বিকাশের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোন বিকল্প নেই ; এই সংকল্পে দুজনই ছিলেন একে অপরের পরিপুরক । আর এ বিষয় গুলো নিয়ে মত বিনিময় করতেই এই দুই দিকপাল নদীর বুকে ছই নৌকা ভাসিয়ে রাতের পর রাত কাটিয়েছেন ।
#নাইব ঊদ্দিন আহমদ এফ বিপিএস (সন্মান)
খ্যাতিমান আলোকচিত্র শিল্পী বাংলাদেশ ।
সুত্র ঃ আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগের ৩য় মূত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে (২৬ জুলাই ২০০১) বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত স্মরন সভায় আমন্ত্রিত অতিথীর বক্তব্যে নাইব ঊদ্দিন ।
…………………………………………………………………………..
*আলোকচিত্রাচার্য মঞ্জুর আলম বেগ ছিলেন বিস্ময়কর এক তীক্ষ্ন মানস চক্ষুর অধিকারী যা দিয়ে তিনি সব কিছুর ভেতর দেখতে পেতেন !
বি পিএস এর ২য় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী উদ্ভোধন দৃক পিকচার গ্যলারী (মে ১৯৯৮) অনুষ্ঠান মঞ্চে আমি যখন বেগ নামক ব্যক্তিত্ত্বের মুখোমুখি হলাম তখন আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলাম – তিনি যেন তার অসম্ভব তীক্ষ্ন দুটি চোখ দিয়ে আমার ভেতরকে দেখছেন । সে এক অলৌকিক ব্যপার ! এ মহৎ প্রতিভাবান মানুষটির সংস্পর্শে এসে আমি গর্বিত ।*
# অধ্যাপক আবু সাইয়িদ
প্রাক্তন তথ্য মন্ত্রী -গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার *
…………………………………………………………….
*Ansel Adams trained as a musician , Eliot Porter as a physician while Mr M A Beg as a technical photographer Air Force . They are all eventually became great master photographers around the world. *
# Brig Gen (Rtd) M Atiqur Rahman Hon FBPS
Former adviser BPS
Rep : Photography Magazine BPS .. July Issue 1999 ..*
…………………………………………………………….
*আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগ চলতেন সময়েরও দশ বছর আগে এবং
বেগ স্যার ছিলেন আলোকচিত্রের এক জীবন্ত এনসাইক্লোপেডিয়া ।*
# মকসুদুল বারী , এফবিপিএস (সন্মান)
স্বনামধন্য সিনেমাটোগ্রাফার – বিশিষ্ট আলোকচিত্র ব্যক্তি্ত্ত এবং আলোকচিত্রাচার্য পদক প্রাপ্ত , বেগ স্যারের ছাত্র
সূত্র ঃ ২৬ জুলাই ২০১৮ বেগার্ট ইনস্টিটিউট এবং বেগার্ট ফোরাম আয়োজিত স্মরন সভা ।।
………………………………………………………….
* আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগ আমাদের গুরু ছিলেন – আছেন – থাকবেন চিরকাল*
গোলাম মোস্তফা ঃ এফবিপিএস (সন্মান) একুশে পদক ও শিল্পকলা একাডেমি পদকে ভুষিত আলোকচিত্র ব্যক্তিত্ত্ব
………………………………………………………………………………।
*আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগ স্যারের আদর্শ বুকে ধারন করে এখনও বেঁচে আছি *
# দেবব্রত চৌধুরী (দেবুদাঃ এফবিপিএস (সন্মান) – প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিপিআই
……………………………………………………………
*Manzoor Alam Beg*
Manzoor Alam Beg (1 October 1931 – 26 July 1998) was a Bangladeshi photographer. He was awarded Ekushey Padak in 2007 by the Government of Bangladesh.
Beg played a pioneering role in the modern art of photography movement in Bangladesh, setting up of the first photographic training centre known as Begart Institute of Photography (1960) and Bangladesh Photographic Society (1976) in Dhaka, of which he was the founding principal and former president. He was well known for organising photographers and photographic activities in a place that had practically no recent history of institutional or professional photography. Manzoor Alam Beg was honoured as ESFIAP at the FIAP (the distinction “Excellence for Services Rendered” is awarded to those persons who have accomplished exceptional services over a long period for the benefit of The International Federation of Photographic Art) 19th Congress in Germany, 1987. He was honoured with a title Aalokchitracharjo (The Chancellor of Photography) by BPS on behalf of Bangladeshi photographer’s community. He is considered as the Father of Fine Art Photography Movements in Bangladesh. Aalokchitracharjo (The Chancellor of Photography) Manzoor Alam won over 200 national and international awards and honours.
Ref: M A Beg (1 Oct 31: 26 Jul 98) http://buff.ly/1I2mtQn brilliant photographer + talented teacher #photography #Bangladesh #art #education
# Shahidul Alam Hon FBPS
Former president BPS & Former principal BPI
………………………………………………………………
* শিক্ষক প্রসঙ্গে শ্রদ্ধেয় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বলেন –
“আমি আমার জীবনে অসাধারণ শিক্ষদের পেয়েছিলাম। পৃথিবীতে বড় মাপের মানুষ মানেই এক শিক্ষক। অন্যের হৃদয়ে বেঁচে থাকাই হচ্ছে বেঁচে থাকা। শিক্ষকেরা আমরা অন্যের হৃদয়ে বেঁচে আছি”।
তেমনি আমিও আমার জীবনে অসাধারণ শিক্ষকদের সান্নিধ্য পেয়েছি। বড় মাপের বিশাল হৃদয়ের অসাধারণ শিক্ষক ছিলেন এম, এ, বেগ স্যার । আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বলেছেন – “আমরা অন্যের হদয়ে বেঁচে থাকি”। বেগ স্যারও বেঁচে আছেন আমাদের হৃদয়ে।
স্মৃতিচারণ: কামাল উদ্দিন–
বেগ স্যারের ছাত্র , লেখক এবং প্রাক্তন সভাপতি এন পি এস
………………………………………………………………………………….
Alokchitracharjo (the Chancellor of Photography) Manzoor Alam Beg M A Beg sir was a rare talented scholar , philosopher , teacher and teacher of the teachers , organizer, leader of the photography movement Bangladesh , poet of photography language , father of fine art photography Bangladesh and the dreamer of national photographic institute in Bangladesh .
#Abdul Malek Babul FBPS , Hon FBPS
Student of Beg Sir for ever
Former vice president BPS & former principal of BPI
…………………………………………………………………………………………….
# ৩ রা মার্চ ১৯৮৫ ইং দুপুর ১২টা। মনজুর আলম বেগ স্যারের অফিস কক্ষ। বাংলাদেশ জাতীয় বিজ্ঞান গবেষনাগার, এলিফেন্ট রোড, ঢাকা। তিনি তখন এই সংস্থার সিনিয়র রিপ্রোগ্রাফিক অফিসার। অত্যন্ত প্রিয়ভাজন একজন বালক হিসেবে জাতি সংঘ তথ্য কেন্দ্র কর্তৃক আয়োজিত ফটোগ্রাফি প্রতিযোগীতায় পুরস্কার হিসেবে পাওয়া আমার ডায়েরীটা বাড়িয়ে দিলাম;-স্যার একটা কিছু লিখে দেন – স্বভাব সুলভ মৃদু হাসিতে ডায়েরীটা হাতে নিয়ে বললেন ; দ্বিতীয় পাতায় লিখলাম। প্রথম পাতাটা ড্যাডির (গোলাম কাশেম) জন্য থাকলো। গোলাম কাশেম (১৯১২-১৯৯৮) ক্যামেরা রিক্রিয়শন ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। গুরুজন ও গুনীদের অসম্ভব শ্রদ্ধা ও সম্মান করা ছিল বেগ স্যারের চারিত্রিক বৈশিষ্ট। ড্যাডি উপাধিটা বেগ স্যারই তাঁকে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রবীনতম আলোকচিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে। সেই ড্যাডির জন্য রাখলেন আমার ডায়েরীর প্রথম পাতা। দ্বিতীয় পাতায় লিখলেন-
“বালাদেশে সরকারী বা সরকার স্বীকৃত একটি আলোকচিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হবে এটাই ছিল আমার বড় আশা। কিন্তু আমার জীবদ্দশায় এ আশা পূর্ণ হবেনা। আমি যথেষ্ঠ ক্লান্ত। চেষ্ঠা করছি দেশে আলোকচিএীদের দের মান উন্নয়নের জন্য। ফলাফল সম্বন্ধে আমি সন্তুষ্ট নই। আমার উত্তর সূরীরা কিছু একটা করুক এটাই আমার শেষ আকাঙ্খা।”
স্বাঃ এম এ বেগ – ১১/০৩/১৯৮৫
লেখা শেষকরে ডায়েরীটা আমার হাতে দিয়ে বললেন এগিয়ে যান (ছোট বড় সবাইকে “আপনি বলে সম্বোধন করতেন) সবাইকে নি
য়ে-;শিক্ষা, চর্চা, সংগঠন ও আন্দোলনের কঠিন পথ ধরে। আমার দোয়া আর্শিবাদ থাকবে চিরদিন। বাংলা দেশের আলোক চিত্রের অগ্রযাত্রাকে ছড়িয়ে দিতে হবে বিশ্বময়। কারন আলোক চিত্র একটি সার্বজনীন ভাষা। এর কোন স্থান কাল পাত্র নেই। একমাত্র আলোক চিত্রের প্রতিবাদী অবয়ব ও নান্দনীক চর্চাই পারে পরিবার সমাজ রাষ্ট্র তথা বিশ্বকে একটি স্বর্গ উপহার দিতে। আলোকচিত্রই পারে মানুষের মূল্য বোধ আবেগ ও মানুষ্যত্বকে জাগিয়ে তোলার মধ্য দিয়ে অনবদ্য সৃষ্টির সীমাহীন পথের তীর্য যাত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে। আরও অনেক মূল্যবান কথা তিনি তখন বলেছিলেন একজন সত্যিকারের বিদগ্ধ দার্শনিক ও শিক্ষা গুরুর মত।
আলোকচিত্র আন্দোলনের এই অপরাজেয় সেনাপতি, শিল্প সত্বার হিমালয়, শিক্ষা সত্বার প্রতিকৃত , সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু আলোক চিত্রাচার্য এম এ বেগ এর সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের সৌভাগ্য হয় ১৯৮০ সালের মার্চ মাসের কোন এক স্নিগ্ধ শীতল বিকেলে তাঁর প্রতিষ্ঠিত বেগাট ইনষ্টিটিউটের শ্রেণী কক্ষে। আমি তখন সমাজ কল্যান অধিদপ্তরের পরিচালনায় “ফটোগ্রাফি ট্রেনিং সেন্টার” আরমানী টোলা ঢাকার ডিপ্লোমা কোর্সের ছাত্র। ৫০ দশকের মাঝা মাঝিতে আরমানী টোলা যুব ও সমাজ কল্যান কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠিত হয় এই ইনষ্টিটিউট। প্রখ্যাত আলোক চিত্র সাংবাদিক একুশে পদক প্রাপ্ত গোলাম মাওলা তার সহকর্মীদের নিয়ে এইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের প্রিন্সিপাল ছিলেন তখন এজাজ খান; এম এ বেগ স্যারের অতন্ত প্রিয় ভাজন ও আত্মার আত্মীয়। এজাজ খান ছিলেন তখন বাংলাদেশ সৌখিন নাট্য গোষ্ঠি ফেডারেশনের সভাপতি, চলচ্চিত্র পরিচালক এবং আলোক চিত্র আন্দোলন ও শিক্ষা ক্ষেত্রে একজন নিবেদিত প্রান কর্মী। একদিন এজাজ স্যার ক্লাশে বললেন তোমাদের পরবর্তী ক্লাশ হবে বেগাট ইনস্টিটিউটে। আমার অতি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ও শিক্ষক অধ্যক্ষ এম এ বেগ তোমাদের ক্লাশ নেবেন। তারপর এজাজ স্যার আমাদের ঠিকানা ও ক্লাশে উপস্থিতির সময় ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করিয়ে সেদিন ক্লাশ শেষ করলেন।
পরদিন বিকেল ৫ টা। আমরা ১৮ জন ডিপ্লোমা ছাত্র ছাত্রী বেগার্ট ইনস্টিটিউটের শ্রেনী কক্ষে বসে আছি। এজাজ স্যার আমাদের সাথে আছেন। আমরা অপেক্ষা করছি। একটু পরে একটি ব্রিফ কেস হাতে গুরু গম্ভীর পদক্ষেপে ধীর লয়ে ক্লাশে ঢুকলেন মধ্য বয়সী এক ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। মুখে ফ্রান্স কাট দাঁড়ি। আমাদের প্রিন্সিপাল এজাজ খান স্যার উঠে দাঁড়িয়ে সালাম ও করমর্দন করলেন। আমরাও দাঁড়িয়ে রইলাম। এজাজ স্যার পরিচয় করিয়ে দিলেন। ইনি হচ্ছেন এম এ বেগ স্যার। বেগ স্যার তখন স্বভাব সূলভ বিন্যাসিত হাসিতে আমাদের বসার জন্য বললেন। আমরা বসলাম। স্যার প্রথমেই নিজের পরিচয় ও বেগাট ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠা ও পরিচিতি তুলে ধরলেন। তার পর ক্লাশ শুরু। সে এক মজার অনুভূতি, অনবদ্য- অম্লান স্মৃতি। মন্ত্রমূগ্ধ হয়ে পিন পতন নিরবতায় আমরা উপভোগ করলাম একজন অতি উচ্চ মার্গের হৃদয়বান শিক্ষা গুরুর সহজ সরল ভাষায় মূলবান উচ্চারন।
বেগ স্যার বেগার্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছিলন ১৯৬০ সালে ৬৩ নং নর্থব্রুক হল রোড ঢাকায়। তারপর ৩৩ নং তোপখানা রোডে বেগার্ট স্থানান্তরিত হয় এবং সর্বশেষ স্থায়ীভাবে গড়ে ওঠে ৮৩/১ সায়েন্স ল্যাব রোড ঢাকায়। এই ঠিকানাটিতে ইনস্টিটিউট ধীরে ধীরে আলোকচিত্র শিক্ষানুরাগী ও আলোকচিত্র প্রেমীদের তীর্থ স্থানে পরিনত হতে থাকে এবং বিরতিহীন ভাবে দীর্ঘ ৫৫ বছর ধরে আলোকচিত্রের জ্যোতি ছড়িয়ে জ্যোতির্ময় করে রেখেছে বাংলাদেশের আলোকচিত্র ভূবন। প্রাতিষ্ঠানিক আলোকচিত্র শিক্ষায় শিক্ষা দান করে সমাজ-দেশ-জাতি ও আন্তর্জাতিকতায় পরিচিতি লাভ করেছেন স্বগৌরবে। সংবাদ মাধ্যম , শিল্প মাধ্যম ও বিজ্ঞান গবেষনা সহ আলোকচিত্রের বহুমাত্রিক ব্যবহারে আলোকচিত্র শিল্পী ও কারিকর তৈরীর চাকাকে রেখেছেন সঞ্চালিত। এটা একমাত্র সম্ভব হয়েছে এম এ বেগ নামক মহান মানবিক মানুষটির সততা, নির্মোহ, আন্তর্জাতিকতা, দেশ প্রেম ও শিল্পানুরাগের প্রতি নিঃস্বার্থ নিবেদিত মানসিকতার প্রান স্পন্দনে। বর্তমানে বেগার্ট ইনস্টিটিউট ডিপ্লোমা ও বেসিক ফটোগ্রাফি কোর্স পরিচালনা ও বেগার্ট ফোরাম নামে একটি বহুমাত্রিক শিল্প ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে তুলেছে। আলোক চিত্রাচার্য এম এ বেগ এর সুযোগ্য ছেলে জনাব ইমতিয়াজ আলম বেগ এই মহা কর্ম যজ্ঞের কান্ডারী হিসেবে নিজেকে সার্বক্ষনিক ভাবে নিয়োজিত রেখেছেন। বেগার্ট ফোরামের মত করেই আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগের অক্লান্ত প্রচেষ্ঠায় বেগার্ট ইনস্টিকিউট এর উদর থেকে ১৯৭৫ সালের ২১ শে ডিসেম্বরের এক শুভ লগ্নে জন্ম লাভ করে বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (বিপিএস)। এদিনটি ছিল বেগার্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফির ১৫ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। এ উপলক্ষে এক বর্ণাট্য অনুষ্ঠানে জনাব এম এ বেগ ঢাকায় বসবাসরত আলোকচিত্র পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তি (পেশাদার ও সৌখিন ) শুভানুধ্যায়ীদের আমন্ত্রন জানান। এতে অনেক আলোকচিত্রামোদির আগমন ঘটে। এক পর্যায়ে নেতৃস্থানীয় ও অভিজ্ঞ আলোকচিত্র ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বেগ স্যারের সভাপতিত্বে এক খোলা মেলা আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় এম এ বেগ বাংলাদেশে সুকুমার আলোকচিত্র শিল্পের চর্চা- উন্নয়ন- ব্যবহার ও জনপ্রিয়তার প্রসার এবং আলোকচিত্রীদের সামাজিক ও রাষ্টীয় ক্ষেত্রে যথাযথ মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করার জন্য আলোকচিত্রীদের একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলার উপর বিশেষ জোর দেন এবং একটি স্বতস্ফুর্ত প্রস্তাব পেশ করেন এবং সর্ব সম্মতিক্রমে সেই প্রস্তাব গৃহীত হয়। উপস্থিত আলোকচিত্র ব্যক্তিত্বদের নিয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি এ্যাডহক কমিটিও গঠিত হয়। এ্যাডহক কমিটি অতপর একটি সংবিধান তৈরী করে পরবর্তী সাধারন সভায় উপস্থাপন করেন এবং তা সর্ব সম্মতিক্রমে পাশ করা হয় এবং একটি সংবিধান/নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় । সে অনুযায়ী ৩০ মে ১৯৭৬ প্রথম সাধারন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়। নির্বাচিত সভাপতি জনাব এম এ বেগ বিপিএস নামক আতুড় ঘরের শিশুটিকে বেড়ে ওঠার জন্য সাহায্যের হাত উদার ভাবে প্রসরিত করে দৃপ্ত ও বলিষ্ট কন্ঠে ঘোষনা দেন – “যতদিন পর্যন্ত বিপিএস নিজের শক্ত পায়ের ওপর শক্ত হয়ে দাঁড়াতে না পারবে তত দিন বেগার্ট ইনস্টিটিউট তার নিজস্ব স্থানে বিপিএস এর বাসস্থান ও নার্সিংয়ের ব্যবস্থা করবে।
ইনশাআল্লাহ বিপিএস একদিন বাংলাদেশ তথা বিশ্বের অন্যতম বিখ্যাত সংগঠন হিসেবে আত্ম প্রকাশ করবে। স্যারের অক্লান্ত পরিশ্রম ,সাংগঠনিক কর্ম দক্ষতা , উদার নেতৃত্ত্ব এবং সবার আন্তরিক সহযোগিতর ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই বিপিএস একটি সর্বজন প্রিয় শক্তিশালী আলোচিত্র সংগঠনে পরিনত হল। বিপিএস এর কর্মকান্ডের পরিধি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বহুমাত্রিক ভাবে প্রসারিত হওয়ায় বেগ স্যার বিপিএস কে আরও সুন্দর- সুষ্ঠু ও সুশৃংখল ভাবে পরিচালিত করার জন্য একটি নতুন কার্যালয় ভাড়া নেয়ার সিদান্ত নেন। সে মোতাবেক স্যারের অত্যন্ত পরিচিত, সুহৃদ ও ভক্ত এক স্বজ্জন ভদ্র লোকের (নামটা মনে নেই) সাথে চুক্তি বদ্ধ হয়ে তার ৮৭ নং সায়েন্স ল্যাব রোডের নিচতলায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। ১লা জানুয়ারী ১৯৮৪ তে বিপিএস তার নতুন ঠিকানায় স্থানান্তরিত হয়। এখানে উল্লেখ্য যে বেগ স্যার বিপিএস ভাড়া সংক্রান্ত ব্যয় সংকোচনের জন্য উক্ত ফ্ল্যাটের অর্ধেক অংশ বিপিএস এর ১নং সদস্য এবং স্যারের সার্বক্ষনিক সাংগঠনিক সহচর বিশিষ্ঠ আলোকচিত্র শিল্পী জনাব বিজন সরকারকে ভাড়া দেন। বিজন সরকার তার পরিবার নিয়ে সেখানে বসবাস করতেন এবং স্যারের অনুরোধে বিপিএস এর কার্যক্রম সার্বক্ষনিক ভাবে দেখা শুনা করতেন। ১৯৮৪ সালে সবাইকে নববর্ষে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বেগ স্যার লিখলেন “নববর্ষ আপনাদের জন্য সুখময় হোক এই কামনা করি”। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৩ পর্যন্ত বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির নিজস্ব কার্যালয় ছিলনা। আমাদের সবার সমবেত চেষ্টায় বিপিএস নতুন কার্যালয়ে উঠেছে। একটি নতুন জায়গায় অফিস শুরু করতে হলে স্বাভাবিক ভাবে অনেক সমস্যা থাকে। এখানেও তাই হয়েছে। চেয়ার টেবিল থেকে আরম্ভ করে স্টুডিও ল্যাবরেটরী, যন্ত্রপাতি, সব কিছুই সোসাইটির দরকার। প্রাথমিক ভাবে ধার করে এসব চালাতে হবে। সোসাইটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য এখন থেকে যথেষ্ঠ পরিশ্রম করতে হবে সবাইকে। সকল সদস্যদের সমন্বিত সহযোগিতা ছাড়া বিপিএস চালানো সম্ভব নয়। এটা উপলব্দি করে নানা ভাবে সোসাইটির আয় বাড়ানোর কাজে নিঃস্বার্থ ভাবে আমাদেরকে কাজ করে যেতে হবে। নতুন বছরের গোড়াতেই সোসাইটির নির্বাচন হয়ে থাকে। এবার কিছু তরুন সদস্য দায়িত্ব গ্রহনে এগিয়ে আসবেন আশা করি। নতুন কার্যালয়ে নবীনদেরকে এখন থেকেই গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে সম্পূর্ণ শূণ্য থেকে। অবশ্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিত্বরা পেছন থেকে সাহার্য্যে করে যাবেন এ আশাও থাকলো।
সোসাইটির জন্য একটি ট্রাষ্ট গঠন করা হয়েছে। ৩০,০০০/- (ত্রিশ হাজার) টাকা এই ট্রাষ্টের মূলধন হিসেবে বাংকে এফ ডি আর হিসেবে রক্ষিত হয়েছে। প্রতি বছর এ ফান্ডের আয় থেকে টাকা তুলে “বছরের সেরা ফটোগ্রাফারদের” মাঝে নগদ পুরস্কার হিসেবে বিতরন করা হবে। যেহেতু নিয়মিত সদস্যরাই “ বর্ষসেরা ফটোগ্রাফার” প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করবেন সেহেতু সবাই বার্ষিক চাঁদা নিয়মিত রাখবেন এটা আশা করি।
সকল সদস্য, বিজ্ঞাপন দাতা, অনুদানকারী সংস্থা এবং ফটোগ্রাফী বন্ধুদের তাদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ।
এম,এ, বেগ
সভাপতি।
৭ই জানুয়ারী ১৯৮৪ সলে বিপিএস এর সাধারন নির্বাচন হলো। জনাব এম এ বেগ সভাপতি ও কাজী মিজানুর রহমান সাধারন সম্পাদক সহ ১১ সদস্যের একটি নির্বাহী পরিষদ গঠিত হলো। ব্রিগেডিয়ার (অবঃ) এম আতিকুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ড. আনসার উদ্দিন আহম্মদ সহ ১৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত হলো। বেগ স্যারের নেতৃত্বে পূর্ণ উদ্যমে বিপিএস অগ্রযাত্রা শুরু হলো। ২৭ জানুয়ারী সন্ধায় ৮৭ নং সাইন্স ল্যাব রোডে বিপিএস এর নতুন কার্যালয় উদ্ধোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিদ্যা বিভাগের সচিব বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. আবদুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দিন। বিপিএস এর সৃপ্নদ্রষ্টা, জন্মদাতা, সার্বক্ষনিক সেবক ও শক্ত খুটি এম এ বেগ বিপিএস এর সাংগঠনিক দক্ষতা ও কর্মকান্ড বাড়িয়ে কিভাবে এদেশের আলোকচিত্র শিল্পের অগ্রযাত্রাকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে সর্বক্ষন চিন্তা ভাবনা করতেন। এমন কি বিপিএস ও ফটোগ্রাফির স্বার্থে যেকোন কঠোর সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ নিতেও কুন্ঠা বোধ করতেন না।
এর মধ্যে ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ এর মাঝা মাঝি কোন একদিন বিশিষ্ট শিক্ষা বিদ ড. আনোয়ারা মনসুর তাঁর ছেলে ড.শহীদুল আলমকে নিয়ে বেগার্ট ইনস্টিটিউট এ আসেন। ড.আনোয়ারা মনসুরের সাথে বেগ স্যারের ছিল দীর্ঘ দিনের পরিচয় এবং ভাই বোনের পারস্পরিক শ্রদ্ধা বোধের সম্পর্ক। ড. মনসুর বললেন বেগ সাহেব, এ আমার ছেলে শহীদুল আলম, লন্ডন ইউনিভার্সিটির অর্গানিক ক্যামেষ্ট্রির প্রভাষক, সম্প্রতি দেশে এসেছে। আমার একমাত্র ছেলে আমি আর ওকে আর ফিরে যেতে দেবনা। এদেশে তো কেউ তাকে চিনেনা। আপনি আপনার সাথে রেখে ওকে দেশ মুখী করেন। বোনের কথায় বেগ স্যার সায় দিলেন এবং ৩ রা মার্চ ১৯৮৪ এর বিপিএস এর সাধারন সভায় ড.শহীদুল আলমকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেন। এম এ বেগ এর সভাপতিত্বে অনুষ্টেয় সাধারন সভায় স্যার শহীদুল আলমকে তার লন্ডনের জীবন যাপন, ফটোগ্রাফী ও ফটোসাংবাদিকতা বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরার আমন্ত্রণ জানান।
মিঃ আলম আলোচনা শুরু করেই বললেন তিনি বিশ্ব মুসলীম লীগের ফটো সাংবাদিক এবং মুসলিম লীগের লন্ডন শাখার পক্ষে ছবি তোলার এসাইনমেন্ট নিয়ে সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন। এরপর তিনি সমসাময়িক ফটোগ্রাফি ও এর টেকনিক্যাল নানা বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে তার মূল্যবান অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন – (সুত্র বিপিএস নিউজ লেটার এপ্রিল ১৯৮৪) । বেগ স্যার অত্যন্ত ধৈর্য ও আন্তরিক ভাবে তার আলোচনা পর্যবেক্ষন করেন এবং মনে মনে ড.আলমকে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে তার সহযোগী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে সম্ভবত মনস্থির করে ফেলেন। এর পর বেগ স্যার বিপিএস এর সদ্য নির্বাচিত সাধারন সম্পাদক কাজী মিজানুর রহমানের সাথে একান্ত আন্তরিক আলোচনা করে তাকে সাধারন সম্পাদক পদে ইস্তফা দেয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানান এবং সে পদে শহীদুল আলমকে কো-অপ্ট করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। বাংলাদেশের আলোকচিত্র শিল্প উন্নয়নের স্বার্থকে সব কিছুর উর্দ্বে স্থান দিতেন বলেই এবং আরও বহুমাত্রিক উন্নয়নের কথা ভেবেই স্যার এমনি কঠিন সিদ্ধান্ত নিলেন।
সাধারন সম্পাদক মিজান ভাই সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু এম এ বেগের অনুরোধ অবনত মস্তকে গ্রহন করলেন এবং এভাবেই এম এ বেগ এর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৮৪ সালে ২০শে জুন বিপিএস কার্য নির্বাহী পরিষদের সভায় মিঃ আলমকে সাধারন সম্পাদক হিসেবে কো-অপ্ট করা হয়। এর আগে কাজী মিজান ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে সাধারন সম্পাদকের পদ থেকে অব্যহতি গ্রহন করেন। সে থেকে মিঃ আলম বেগ স্যারের নেতৃত্বে একদশকেরও বেশী সময় ধরে বিপিএস ও বাংলাদেশের ফটোগ্রাফী শিল্পের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এম এ বেগ স্যারের পরামর্শ, উৎসাহ ও বদান্যতায় আকৃষ্ট হয়ে ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে আমি বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সদস্য পদ গ্রহন করি নং (২৩৪/৮০)। বর্তমানে ফেলো এবং আজীবন সদস্য। উদ্দেশ্য ছিল যেকোন ভাবেই আমার প্রেম-আবেগ ও উদগ্র ভালোবাসার পাত্র আলোকচিত্র শিল্পকে হৃদয়ের গহীনে ধারন করে এগিয়ে চলা। এম এ বেগ স্যারের মত একজন নিবেদিত প্রান আলোকচিত্র ব্যক্তিত্ব সংগঠক ও শিক্ষা গুরুর সাহচ্যর্যে থাকা।
আমার সদস্য পদ অনুমোদন করে স্যার বললেন সামনেই আমাদের বার্ষিক আলোকচিত্র প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হবে – আপনি ৩ টা ছবি প্রিন্ট করে জমা দিবেন। তখন মাত্র ফটোগ্রাফির হাতে খড়ির কাল চলছে। স্যারের কথায় আশ্চর্য – আগ্রহ – ভয় তিনটাই অনুভূতিকে নাড়া দিল। তখন বেকার আমি ! চৌমাথার মোড়ে দাঁড়িয়ে সব সময় ভাবতাম ‘অতিরিক্ত একজন কোনদিকে হেঁটে যাবো’! আমার মৌলভী সাহেব বাবাও আমার ফটোগ্রাফীর ঘোর বিরোধী ছিলেন। বছর খানিক পর আমি যখন জাপানে এশিয়ান কালচারাল সেন্টার ফর ইউনেস্কো পুরস্কার এবং দেশে বিপিএস আয়োজিত দ্বিতীয় জাতীয় আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক সহ প্রথম পুরস্কার পেলাম তখন বাবা বুঝতে পেরেছেন আমি কিছু একটা ভালো কাজ করছি। আসলে আমার বাবা ছিলেন একজন আধুনীক ও সংস্কার মনা মৌলভী সাহেব। তার অন্য মৌলভী বন্ধুরা তাঁকে আমার ফটোগ্রাফী চর্চার বিরুদ্ধে মোটিভেট করেছিলেন।
যাই হোক আমার ঢাকাইয়া বন্ধুদের সহযোগিতায় ৩ টা ছবি প্রিন্ট করে বিপিএস এর বার্ষিক প্রতিযোগীতায় জমা দিলাম। মাসিক সাধারন সভায় ছবির বিচার কার্য শুরু হলো। বিচারক ছিলেন বিখ্যাত আলোকচিত্র শিল্পী আনোয়ার হোসেন ও ডলি আনোয়ার। এক সময় ফলাফল চলে এলো সভাপতি এম এ বেগ স্যারের হাতে। সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আমি একদম পেছনের সারিতে এক কোনায় ভয় লেশে জড়ো সড়ো হয়ে বসেছিলাম। স্যার পুরস্কার ষোষণা করছেন।
প্রথম পুরস্কার -শাহাব ছাত্তার (পরবর্তীতে জিএমজি এয়ার লাইন্স এর এমডি)
দ্বিতীয় পুরস্কার কাজী মিজানুর রহমান (কর্মকর্তা ব্যান্সডক, বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত)
রম্যরস আর শিল্পরসে পরিপূর্ণ বেগ স্যার যেকোন আড্ডায় বা সভায় সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন তার স্বভাব সুলভ বদান্যতা রসে। হঠাৎকরে চমকিয়ে দিয়ে সবাইকে মূগ্ধ করে দেয়ার অসম্ভব ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাগুরু, সাংগঠনিক গুরু ও ছবি গুরু বেগ স্যার। তৃতীয় পুরস্কার ঘোষণার আগে তাই অনেক মজা করলেন স্যার এবং মজা করার ভেতর দিয়ে আলোকচিত্র শিল্পের উন্নয়ন,করন-কৌশল ও নন্দনতাত্তি¡ক বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিলেন ।এর এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই ঘোষণা করলেন – তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য জনাব আবদুল মালেক বাবুল। সবাই হত বাক ! আমি তো ভীষন উত্তেজিত।হৃদয় জুড়ে চলছে বাড়তি হৃৎ কম্পন ! মনে মনে উচ্ছারিত হলো – এত বাঘা বাঘা আলোক চিত্রীর ছবি থাকতে পুরস্কার পেল নবীন অনভিজ্ঞ আনাড়ী এক বালক।
স্যার আমাকে কাছে ডাকলেন ছবির টেকনিক্যাল ও তোলার পটভূমি সম্বন্ধে জানতে চাইলেন। কিছু বলেছি আর কিছু ভয়ের অতলে হারিয়ে গেছে। কিন্তু স্যারের যে মূল্যবান ও উদ্দীপনা মূলক বানী অমার জন্য সেদিন রাখলেন তা চিরজনম আমার উচ্ছাসকে জাগ্রত রেখেছে, তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সৃষ্টির মহাসড়কের যাত্রী হতে। স্যার বললেন “দেখেছেন আমি এম এ বেগ ও এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহন করেছি, আমি পুরস্কার পাইনি আপনি পেয়েছেন। এগিয়ে যান কমিটমেন্ট ও সাহস নিয়ে” নবীনদের প্রতি এমনি উদার প্রেরনার বৃষ্টি বর্ষন একমাত্র মহৎ সৃজনশীল দার্শনিক ও সাধু পুরুষদের পক্ষেই করা সম্ভব।
স্যার শুধু শিক্ষাগুরু হিসেবে ছাত্রদের শিক্ষা সম্প্রদান করেই ক্ষান্ত ছিলেন না, মানবতাবাদী এই উদার পুরুষ বেকার শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য যেখানেই ফটোগ্রাফী বিষয়ক চাকুরীর খোজ পেতেন সেখানেই তার ছাত্রদের পাঠাতেন এবং সব প্রকার সাহায্য করতেন। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল সার্ভিস ঢাকা সেনানিবাসে একজন প্রথম শ্রেণীর অফিসার (বেসামরিক) হিসেবে আমার চাকুরী তার জলন্ত উদাহরন। এখানে একটা ব্যপার উল্লেখ না করে পারছিনা – সেনানিবাসে আমার এ চাকুরীর ইন্টারভিউ বোর্ডে নিয়োগকারি কতৃপক্ষ কতৃক আমন্ত্রিত চেয়ারম্যান হিসেবে স্যারের দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল যা পুর্ব থেকেই নির্ধারিত ছিল। নিয়োগকারি কতৃপক্ষের অন্যতম সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সিরাজ জিন্নাত এ ব্যপারে স্যারের সাথে যাগাযোগের দায়িত্ব পালন করেছিলেন । উল্লেখ্য সিরাজ জিন্নাত স্যার ছিলেন বিশ্বের কয়েকজন খ্যাতনামা ইউরোলজিষ্টদের মধ্যে অন্যতম এবং মেডিকেল ফটোগ্রাফি বিষয়ে অভিজ্ঞ । তিনি তখন বিপিএস এর একজন সিনিয়র সদস্য ও পৃষ্টপোষক এবং বেগ স্যারের ভীষন ভক্ত ছিলেন । তো ইন্টারভিউ কার্ড হাতে পেয়ে আমি অংশ গ্রহন করার আগের দিন ; মে মাসের (১৯৮৪ সাল) মাঝা মাঝি স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম ইন্টারভিউ বিষয়ে কিছু টিপস , দীক্ষা ও দোয়া নেয়ার জন্য । স্যার তার গুরুত্ত্বপুর্ন সব কাজ রেখে এ বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে আমাকে দিক নির্দেশনা দিলেন এবং তারপর হঠাৎ করেই টেলিফোনের রিসিভার তুলে ব্রিগেডিয়ার সিরাজ জিন্নাত স্যারকে বললেন – জিন্নাত সাহেব আমি কিন্তু আপনাদের ফটোগ্রাফিক অফিসার নির্বাচনী বোর্ডে উপস্থিত থাকতে অপারগ – কারন আমার একজন ছাত্র প্রার্থী হিসেবে সেখানে অংশ গ্রহন করছে। অপর প্রান্ত থেকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও স্যার রাজী হলেননা। তারপর রিসিভারটা রেখে আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন – আমার দিক নির্দেশনা ফলো করে প্রস্তুতি নিয়ে সাহসের সাথে ইন্টারভিউ বোর্ড ফেস করবেন ন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনি কৃতকার্য হয়ে ফিরে আসবেন। স্যারের এ ধরনের সুদৃঢ় নৈতিক অবস্থান আমাকে বিস্ময়ে অভিভুত করেছিলো ! যদিও আমি আগে থেকে জানতামনা যে স্যর ঐ ইন্টারভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত ছিলেন এবং স্যারও জানতেননা আমি ওখানকার এক জন প্রার্থী । কারন এই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটা তখন আমার প্রিয় শ্রদ্ধেয় আমান ভাই (একজন প্যাশোনেট ফটোগ্রাফার এবং ফটোগ্রাফি ট্রেনিং সেন্টার আরমানীটোলা ইয়থ ওয়েলফেয়ার সেন্টারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং বেগ স্যারের অতি প্রিয় ভাজন) আমাকে পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং এপ্লাই করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দিয়েছিলেন । যাই হোক স্যারের এমনি বিস্ময়কর দৃঢ় নৈতিক অবস্থান দেখে আমি কিছুটা মন মরা হলেও সেদিন গর্বে আমার মন ভরে গিয়েছিল। পরের দিন যথারীতি ইন্টারভিউতে অংশ গ্রহন করে আমি দৃঢ় মনোবল ও সাহসিকতার সাথে আমার যোগ্যতা প্রমান করার আপ্রান চেষ্টা করেছিলাম এবং ১৬ জন প্রতিযোগীর মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে এবং নিয়োগ পত্র হাতে পেয়ে উত্তেজিত আমি প্রথমেই স্যারকে জানাতে গিয়েছিলাম । স্যার কিছুক্ষণ আমার দিকে নির্বাক তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন – বলেছিলাম না আপনি পারবেন। আমি গভীর বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম স্যারের পুরো অবয়ব জুড়ে ফুটে উঠেছে এক গর্বের অনুভূতি ! স্যারের জীবনে এমনি রয়েছে আরও শত সহস্র দৃষ্টান্ত ।
বের্গাট ইনস্টিটিউটের ব্যস্ততম অফিসে বসে সার্বক্ষনিক বিপিএস নামক সংগঠনটিকে আগলে রেখে এর কর্মকান্ডকে প্রসারিত করার নিরলস কান্ডারী বেগ স্যার একদিন আমাকে বললেন যেটুকু সময় পান সেই সময়টুকুই বিপিএসের জন্য ব্যয় করেন এবং অন্যান্য তরুনদেরকে ও উৎসাহিত করুন নির্দ্বিধায়। বেগ স্যারের আদেশ মাথায় নিয়ে বিপিএস এর সাথে জড়িয়ে পড়লাম।
০৭ ডিসেম্বর ১৯৮৫ সালে স্যারের উদ্যোগে বিপিএস ফেডারেশন এ উন্নীত হয়। বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি মূল নামটি ঠিক রেখে তিনি ফেডারেশনের নামকরন করলেন। (বাংলাদেশ ফটোগ্রাফারস ফেডারেশন- বাংলায় ফটোগ্রাফারদের জাতীয় ফেডারেশন)। উদ্দেশ্য ছিল দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আলোকচিত্র সংগঠন গুলোকে একই ছাদের নিচে জড়ো করে বাংলাদেশে আলোচিত্র শিক্ষা ও চর্চার আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করে তোলা এবং একটি জাতীয় আলোকচিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা।
১৯৯০ সালের ১৬ই জুলাই বিকেল ৫.৩০ মি: বিপিএস কার্যালয়ে চলছে নির্বাহী পরিষদের সভা। আলোচনার বিষয় ছিল বিপিএস এর একটি শিক্ষা শাখা চালু করা। প্রচন্ড আত্ম প্রত্যয় নিয়ে স্যার বললেন বিপিএস এর শিক্ষা শাখা আলোক চিত্র বিষয়ে শিক্ষাদানের পাশা পাশি দেশে সরকারী ভাবে চারুকলা ইনস্টিটিউটের ন্যায় একটি পূর্ণাঙ্গ আলোকচিত্র ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার ব্যপারে সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করবে এবং এ ব্যাপারে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পরামর্শ ও সব রকম সহযোগিতা প্রদান করবে। বিপিএস যদি তার শিক্ষা শাখাকে সফল ভাবে পরিচালনা করতে পারে ; তাহলে বেগার্ট ইনস্টিটিউট সবরকম সাপোর্ট সহ ইনস্টিটিউটের সকল শিক্ষা উপকরন বিপিএসকে দান করে দিবে নিঃশর্তে স। উপস্থিত সভাপতি ডঃ শহীদুল আলম সহ আমরা সকল নির্বাহী সদস্য উজ্জীবিত হলাম এবং সর্ব সম্মত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিপিএস এর শিক্ষা শাখা বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক ইনস্টিটিউট (বিপিআই) সেই শুভ জন্ম লাভ করে এবং স্যার হলেন বিপিআই এর একমাত্র উপদেষ্টা ও পৃষ্টপোষক। ৯ই আগষ্ট ১৯৯০ তারিখে প্রথম বেসিক কোর্সের ক্লাশ শুরুর মধ্য দিয়ে শুরু হলো বিপিআই এর শুভ যাত্রা। ২০ শে আগষ্ট ১৯৯০ তারিখের নির্বাহী সভায় জনাব আবদুল মালেক বাবুলের প্রস্তাবের ভিত্তিতে এবং স্যারের সম্মতিক্রমে ডা.শহীদুল আলমকে বিপিআই এর অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয় এবং আব্দুল মালেক বাবুল ও দেবব্রত চৌধুরী হলেন ভাইস প্রিন্সিপাল। শর্ত ছিল ড.শহীদুল আলম বৃটিশ কাউন্সিল ঢাকার সাথে তার ব্যক্তিগত পরিচয় ও সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে বিপিআই এর জন্য নগদ অনুদান ও শিক্ষা উপকরন সংগ্রহ করবেন। ড. আলম সে দায়িত্ব সফল ভাবে পালন করেছিলেন।
উক্ত নির্বাহী সভায় বিপিআই পরিচালনার জন্য একটি গভর্নিং বডিও গঠন করা হয়। সর্ব সম্মতিক্রমে গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হলেন এম এ বেগ স্যার। আর সদস্য হলেন সর্ব জনাব-বিজন সরকার এলবিপিএস (পরবর্তীতে সন্মান সূচক এফবিপিএস) , গোলাম মোস্তফা এলবিপিএস (পরবর্তীতে সন্মান সূচক এফবিপিএস) এবং ড.শহীদুল আলম এফবিপিএস (সন্মান)। পরবর্তীতে ৯০ দশকের মাঝামাঝিতে আবদুল মালেক বাবুলের হাতে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল এর দায়িত্ব দিয়ে ড.আলম বিপিআই থেকে অবসর গ্রহন করেন। বাবুল পরবর্তীতে বিপিএস ও বিপিআই পরিচালনা পর্ষদের সর্ব সম্মত সিদ্যান্তে বিপিআই অধ্যক্ষের দায়িত্ত্ব পালন করেন। বিপিআই সম্বন্ধে লিখতে গেলে লেখার পরিধি অনেক বিশাল হবে। পরবর্তীতে এ নিয়ে লেখার আশা রাখলাম। ফিরে যাচ্ছি আলোকচিত্রচার্যের আলোর সাম্রাজ্যে ।
জলাশয়কে নিয়ে লেখা যায়। পুকুর কে নিয়ে লেখা চলে। নদীকে ঘিরে কাব্য করা যায়। কিন্তু সাগর ! সে তো বিশাল-সীমাহীন তার উদারতা। সকল আবর্জনা ধুয়ে মুছে শুদ্ধ ও সৃজনশীল শিল্প ধারা উপহার দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র তারই আছে- তিনি শিক্ষক, সংগঠক, কবি ,লেখক, ভাস্কর সর্বোপরি শিল্প ও শিল্পী তৈরীর উদার কারিকর আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগ। এক বিশাল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। সাগরের বিশালত্ব ছাড়িয়ে যিনি হয়ে উঠেছিলেন দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব আলোকচিত্র ভূবনে এক অন্যতম বরেন্য ব্যক্তিত্ত্ব । নীলিমার ন্যায় এক বিশাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শত সহস্র আলোক চিত্রীর জন্মদাতা।
তাইতো এম এ বেগ রচিত “আধুনিক ফটোগ্রাফী” বইটি পাক ভারত উপ-মহাদেশে আলোক চিত্রের মৌলিক সংবিধান হিসাবে প্রায় অর্ধ শতাব্দী পরেও ভীষন ভাবে জন প্রিয়।
এই বইটি উপ-মহাদেশে আলোকচিত্র বিষয়ে মাতৃভাষা বাংলায় রচিত প্রথম বই। ৭০ দশকে আধুনিক ফটোগ্রাফি বইটি প্রকাশিত হয় ভারত থেকে। বেগ স্যার হয়ে উঠলেন বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ভারতে বেশি জনপ্রিয় ও পূজনীয়। ভারতে স্যার যে কত জনপ্রিয় ও সম্মানিত ভারতের বিশাল আলোকচিত্র গগনে পা না রাখলে তা বুঝা যাবেনা। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল নিজের চোখে তা দেখা ও উপলব্দি করার। ১৯৮৬ সালের ২০ শে জানুয়ারী বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হয়ে ফটোগ্রাফিক এসোসিয়েশন অব দমদম কোলকাতা আয়োজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ফটোগ্রাফি কনফারেন্সে অংশ গ্রহন করি। শিয়ালদাহ ষ্টেশনে পৌঁছেই দেখি সংগঠনটির পক্ষ থেকে কর্ণধার সহ একদল লোক ফলের ডালা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন বেগ স্যারকে রিসিভ করার জন্য। কুশল বিনিময়ের পর এক যোগে প্রশ্ন আমাদের বেগ স্যার কোথায় ? আমরা উত্তর করলাম স্যারতো আসতে পারেন নি। দেখলাম মুহূর্তে কি ভীষন মন মরা হয়ে গেলেন তাঁরা । স্যারের না যাওয়ার কারন শুনে আরো বিস্ময় প্রকাশ করলেন।
প্রাসঙ্গিক ভাবে এখানে উল্লেখ করতে হচ্ছে- ফটোগ্রাফিক এসোসিয়েশন অব দমদম বিশ্বের সেরা ১১ জন আলোকচিত্র ব্যক্তিত্বকে সম্মান সূচক ফেলোশীপ প্রদান করেন যার মধ্যে এম এ বেগ স্যার ছিলেন অন্যতম। তাই তারা বিশেষ ভাবে আমন্ত্রন পাঠিয়েছিলেন বেগ স্যারকে; এ দুর্লভ সম্মান ব্যক্তিগত ভাবে গ্রহন করার জন্য। স্যার তখন সরকারের একজন পদস্থ কর্মকর্তা হিসাবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থায় (ব্যান্ডসডক) এ কর্মরত ছিলেন। তাই নিয়ম অনুযায়ী তিনি এ পুরস্কার গ্রহণ করার জন্য সরকারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু তৎকালীন আমলাতান্ত্রিক অসহযোগীতা ও হীনমন্যতার কারনে স্যার ভারতে যাওয়ার অনুমতি পেলেন না। সুহৃদ ও শুভাকাংখী অনেকেই বলেছিলেন-অন্যভাবে চেষ্টা করে অনুমতি আদায় করতে। স্যার ক্ষেপে গিয়ে বললেন-এই সম্মান তো আমার চেয়ে আমার দেশ ও জাতিকে বড় করেছে – সন্মানিত করেছে ; আমকে কেন সেটা করতে হবে ? এটাতো রাষ্ট্রের দায়িত্ত্ব । কারন বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় ‘অন্যভাবে’ চেষ্টা এবং সকল প্রকার অন্যায় – নীতিহীনতা ও অসত্যের উর্ধে একজন শুভ্র সরল উদার মনের কঠোর নিয়মতান্ত্রিক নৈতিক গুনাবলীর অধিকারি ছিলেন বেগ স্যার। নীতি ও আদর্শের সাথে কখনও আপোষ করেননি বরঞ্চ অন্যায় ও অসঙ্গতির বিরুদ্ধে সারা জীবন ছিলেন প্রতিবাদী একজন সুপুরুষ ।
তাই খারাপ লেগেছিল যখন ২৭শে জানুয়ারী ১৯৮৬ রাত ৯টায় কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী হোটেল ‘অবরয় গ্র্যান্ড’ এ স্যারের ফেলোশীপ সনদ ও একগুচ্ছ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন অস্কার পুরস্কার প্রাপ্ত বিশ্ববিখ্যাতচলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব জনাব সত্যজিত রায় এম এ বেগ এর হাতে তুলে দেয়ার জন্য। স্যারের অনুপস্থিতি মুহুর্তেই শূণ্যতায় ভরিয়ে দিয়েছিলো সেদিনের সেই আলোকোজ্জল আনন্দঘন পরিবেশ।
ইতিহাস প্রচন্ড ক্ষমতা সম্পন্ন একটি প্রেরনা দায়ক শব্দ। প্রবল প্রতিবাদী ক্ষমতা ও সত্যবাদিতার এক জলন্ত প্রতীক আলোকচিত্র। ইতিহাস আর আলোকচিত্র শুধু সামনেই চলতে জানে। দিতে জানে নিতে জানেনা। আলোকচিত্রকে বুকে ধারন করে ইতিহাস হয়ে উঠে মহা সত্যের এক মহীরুহ। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং বিখ্যাত চলচিত্রকার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা জহীর রায়হানের ‘স্টপ জেনোসাইড’ মুক্তিযোদ্ধা আলোকচিত্র শিল্পী এম এ বেগ স্যার সহ এদেশের শত শত আলোকচিত্রী তথা আলোকচিত্র সাংবাদিক তার জলন্ত প্রমান । তাঁদের সবার ক্যামেরা ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাইফেলের ভাষায় কথা বলেছে- প্রতিবাদ করেছে – বাংলাদেশে গনহত্যাকারী পাকিস্তানী হানাদার কাপুরুষ বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী দালাল, যুদ্ধ অপরাধী এবং স্বাধীনতা বিরোধী মীরজাফর চক্রের বিরুদ্ধে ।
এখন আসে নেতৃত্বের প্রশ্ন। মহৎ-উদার-স্বার্থহীন -পরচিন্তাবাদী, সংস্কারবাদী এবং নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মত একজন সৎসাহসী দেশ প্রেমিক ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন হয় ;বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য, পরবর্তী প্রজন্মকে সঠিক দিক নির্দেশনা ও বিষয় ভিত্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে সৃজনশীল এক নতুন পথের সন্ধান দেয়ার জন্য। তাই তো তাঁরা হয়ে উঠেন গর্বিত এক সোনালী ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান । যেমন বাংগালী জাতির মহান মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাসের স্রষ্টা স্বাধীনতার অমর কবি,সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী , জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীনতার পর আসে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রশ্ন। আমাদের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সৌভাগ্য এখন পর্যন্ত সেই অর্থে না হলেও আমাদের রয়েছে হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ধারার শেকড় । আছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও নিজস্বতা। রবীন্দ্র-নজরুল-আব্বাস উদ্দিন-লালনশাহ-হাছনরাজা -আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু-শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন বাংগালীর বিজ্ঞান ও শিল্প সংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক। ৯ই জুলাই ১৯৯৮ থেকে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে আর একটি নাম। তিনি হলেন আলোকচিত্রের লেখক, সংগঠক, বিশ্ববরেন্য শিক্ষক আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগ। তাঁর নিজ হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (বিপিএস) এই ঐতিহাসিক দিনে আনুষ্ঠানিক ভাবে এম এ বেগ স্যারকে বাংলাদেশের সার্বজনীন আলোকচিত্র সমাজ তথা জাতির পক্ষে ‘আলোকচিত্রাচার্য’ উপাধিতে ভূষিত করে সম্মানিত হয়েছেন। পরবর্তীতে তাঁর জীবদ্দশায় না হলেও মরনোত্তর ‘একুশে পদক’ বেগ স্যারকে সম্প্রদান করে রাষ্ট্রও গৌরবান্বিত হয়েছে।
আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগ যিনি সম্প্রদান করেছেন আজীবন তাঁর অফুরন্ত আলোকচিত্র ভান্ডার থেকে। আমরা শুধু নিয়েছি, নিতে থাকবো অনন্ত কাল । এ দেশ জাতি তাঁর কাছ থেকে পেয়েছ অফুরন্ত সম্পদ – অজস্র আলোকচিত্রি , শিল্প সৃষ্টির কারিকর । যা দিয়ে চলছে নিউজ মিডিয়া ও সায়েন্টিফিক মিডিয়া থেকে শুরু করে মান সম্পন্ন আলোকচিত্রের বহুমুখী কর্মকান্ড।
অসম্ভব সাহস ও মনোবলের অধিকারী ছিলেন বেগ স্যার। ডাক্তার ও ঔষধের ব্যাপারে ছিলেন সব সময় উদাসীন। ‘কর্মই ধর্ম’ এই মন্ত্রে বিশ্বাসী বেগ স্যার থাকতেন সারাদিন কর্মমূখর। প্রশিক্ষন, গবেষনা, লেখালেখি, ছবি নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে নতুন কিছু উদ্ভাবন এবং স্বগোত্রীয়দের নিয়ে মজার আড্ডা আর উদার আতিথ্যেয়েতা নিয়ে কাটাতেন সারা বেলা। আবার রাত্রি নিশিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন স্রষ্টার সাথে আধ্যাত্বিক কাব্য সংলাপে এবং কাঠের বুকে চলতো ঠক ঠক আওয়াজে কাঠখোদাই মাধ্যমে নান্দনিক শিল্প কর্ম নির্মান ।।
স্যারের এম্নি সব ব্যস্ততার সুযোগে জটিল রোগ সমূহ তাঁর সাথে গড়লেন নিবিড় আত্মীয়তা। ভারতীয় জনপ্রিয়তা তাঁকে নিয়ে গেল ভারতে চিকিৎসার জন্য। ফিরে এলেন একটু সুস্থ হয়ে। আবার হঠাৎ ভীষণ ভাবে অসুস্থ। ভর্তি হলেন স্থানীয় হাসপাতালে। ঔষধ ও ডাক্তার বিমূখ বেগ স্যার সবার অনুরোধে অপারেশন করাতে রাজী হলেন। বললেন “মরেই তো যাচ্ছি! যাওয়ার আগে ডাক্তার কেটে কুটে দেখুক। এক্সপেরিমেন্ট করুক। যদি তাদের কিছু অভিজ্ঞতা হয়তো হউক – সে অভিজ্ঞতা অনদের কাজে লাগবে”। অপারেশনের পর তিনি উঠলেন তার প্রিয় বোনের বাসায়।
২০ শে ফেব্রুয়ারী ১৯৯৮ এ দৃক গ্যালারীতে অনুষ্ঠিত হয় বিপিএস দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার বিতরন ও প্রদর্শণী অনুষ্ঠান। আমরা কয়েকজন মিলে ঠিক করলাম যদিও স্যারের অবস্থা আশংকা জনক তবুও স্যারকে কোন ভাবে যদি অতিথি করে অনুষ্ঠানে আনা যায় তবে জীবন সায়াহ্নে এসে মুখো মুখি হবেন অগনিত ভক্ত কুলের। প্রস্তাব রাখলাম স্যারের কাছে। ডাক্তার ও আত্মীয় স্বজনের কড়া নিষেধ সত্ত্বেও স্যার রাজী হলেন। সবার উদ্দেশ্যে বললেন “যদি মরেও যেতে হয় তবুও আমি এ অনুষ্ঠানে যাবো। আমি ভীষণ ক্লান্ত। অনেক দিন থেকে ভীষন একা। সবার মাঝে মিশে গিয়ে একটু আনন্দ পেতে চাই। খুঁজে পেতে চাই হারিয়ে যাওয়া দিন গুলোর ছোঁয়া। হয়তোবা এটাই হবে আমার জীবনের শেষ অনুষ্ঠান। ‘স্যার’ এলেন স্বতস্ফুর্ত ভাবে সবার সাথে কুশল বিনিময় করলেন। ভূলে গেলেন রোগ যন্ত্রণার কথা। আবেগঘন বক্তব্য রাখলেন। বললেন অনেক না পাওয়া বেদনার কথা। নীজের জন্য পাওয়া নয়। আলোকচিত্রের জন্য পাওয়ার কথা। তৎকালীন বিজ্ঞ তথ্য মন্ত্রী জনাব আবু সাঈদ সহ উপস্থিত দর্শক ও ভক্তকুল অবাক বিস্ময়ে শুনলেন স্যারের বক্তৃতা। স্যারের কথাই সত্যি হলো সেই অনুষ্ঠানটিই হলো স্যারের জীবনের শেষ অনুষ্ঠান।
২৬শে জুলাই ১৯৯৮ সালে অজ্ঞান অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। বৃষ্টি স্নাত সোনালী বিকেলের প্রকৃতি যেন নিথর হয়ে গেলো। গোধূলীর লাল আভা মুহুর্তে মিলে গেল আকাশের বুকে। ঘরে ফেরা বিহঙ্গের দল থমকে গেলো। শহরের বুকে জ্বলে ওঠলো রঙ্গীন আলো। আর আমাদের চোখের সামনে ক্রমাগত নিভে যেতে থাকলো প্রজ্জলিত চির সবুজ গাঢ় নীলাভ বাতিটি। আলোর খেলা সাঙ্গ করে সন্ধ্যে ৭:৩০ মি: হৃদয়ের খাঁচা ভেঙ্গে বেরিয়ে গেলো এতদিনের পুষে রাখা অচিন পাখিটি। উন্মুক্ত আকাশে উড়তে উড়তে মিশে গেলো স্বর্গের নিবাসে। সৃষ্টিশীল দার্শনিক ও কীর্তিমান হৃদয়ের কখনও মৃত্যু হয়না। আলোকচিত্রাচার্যের আত্মা চির অমর , চির অমলিন। আমাদের উদ্ভাবন ও সৃজনশীল আলোকচিত্র ভূবনে তিনি বেঁচে আছেন। থাকবেন চিরদিন। আলোনিয়ে চমৎকার ভাবে খেলবেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের সৃষ্টিশীল ক্যানভাসে। স্বর্গের সর্বোচ্চ চূড়ায় বসে প্রান ভরে দেখবেন তাঁর রেখে যাওয়া আলোর পাখিরা উড়ে বেড়াচ্ছেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের আকাশে সুকুমার আলোকচিত্র শিল্পের বারতা নিয়ে ।
তাইতো বার বার ফিরে আসি আমরা আলোকচিত্রাচার্যের জ্যোর্তিময় পৃথীবিতে। আসতেই হবে আলোকচিত্রের ঠিকানার খোঁজে। আসব চিরকাল। তাই আমাদের দাবী ৯ জুলাই ১৯৯৮ দিবসটি রাষ্টীয় ভাবে ঘোষিত হউক, স্বীকৃতি পাক আলোকচিত্রাচার্য দিবস হিসেবে এবং জাতীয় পাঠক্রমের পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হউক আলোকচিত্রাচার্য রম এ বেগের বহুমাত্রিক কর্মমুখর জীবনের বর্ণাঢ্য গল্প। আগামী প্রজন্ম এতে খুঁজে পাবে এক সৃজনশীল চিত্রময় এক মনস্তাত্তিক জগতের ঠিকানা – আদিগন্ত বিস্তৃত হবে তাদের অন্তর চক্ষুর সীমানা।
মনে পড়ে আলোক চিত্রাচার্য এম এ বেগের প্রথম মরোনোত্তর স্মরন বাণীতে তৎকালীন তথ্য মন্ত্রীর স্মৃতি চারন ছিল এরকম – বিপিএস এর দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরন অনুষ্ঠানে আমি যখন বেগ সাহেবের মুখোমুখি হই তখন অবাক বিস্ময়ে আমি লক্ষ্য করলাম তিনি যেন আমার ভেতরকে দেখে নিচ্ছেন তাঁর তীক্ষ্ন অন্তর্চক্ষু দিয়ে। অকপটে অভূতপুর্ব সত্য উচ্চারন।
সত্যি সবকিছুর ভেতর দেখার অসম্ভব ক্ষমতা ছিল আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগের। আলোকচিত্র শিল্পের ভেতর দেখতে পেয়েছেন তিনি আধ্মাত্তিক সাধকের ভুমিকায় অবতীর্ন হয়ে এবং সফল একজন শিক্ষক, সংগঠক , দার্শনিক ও সার্বজনীন আলোকচিত্র গুরু হয়ে উঠেছিলেন ।
তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় সূর্য্য পৃথীবির কোন অংশের এ নিয়ে যেমন কোন বিতর্ক নেই আলোকচিত্র ভূবনে উদিত এই জ্যোতিস্ক সমন্ধেও কোন বির্তক নেই । থাকতে পারেনা। তাঁর আলোকিত জীবন দর্শন জ্যোতি ছড়িয়ে যাবে চিরকাল আলোকচিত্র সাধক ও গবেষকদের মাঝে। তাঁর বর্নাঢ্য জীবনের বহুমাত্রিক কীর্তি নিয়ে চলবে গবেষনা ।
ইতি টানছি এখানেই লেখার -একান্ত বাধ্য হয়ে, লেখার পরিধি নিয়ন্ত্রনে। কারন কলমের পর কলম ফুরাবে – ফুরাবে রীমের পর রীম কাগজ ।আলোকচিত্রাচার্য এম এ বেগ কে নিয়ে লেখা ফুরাবেনা কোন কালে। লেখা চলবে । চলতেই থাকবে …… কারন
আমি দিব্যদৃষ্টির এক কিংবদন্তীর কথা বলছি
…………………………………………….
আমি দিব্যদৃষ্টির অধিকারি এক আধ্যাত্মিক মানুষের কথা বলছি
যিনি প্রথম দর্শনেই তার তীক্ষ্ন দৃষ্টিতে
মানুষের ভেতর দেখে নেয়ার ক্ষমতা রাখতেন
যিনি মধ্য নিশিতের নির্জনতায় স্রষ্টার সাথে সংলাপ করতেন
আলোকচত্র সাধনায় যিনি ছিলেন নিমগ্ন এক ঋিষি
যিনি আলোকচিত্রের অঙ্গ থেকে ওস্তাদ প্রথার বস্র খুলে নিয়ে
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আলো উন্মুক্ত করে দিয়েছন সার্বজনীন পাঠশালায়
যিনি অবাধ উদার শিক্ষার আলো ছড়িয়ে হয়েছেন শিক্ষকের শিক্ষক
যিনি তাবৎ বিশ্বের ১১ জন শ্রেষ্ঠ আলোকচিত্র দার্শনিকদের অন্যতম
আমি সেই কিংবদন্তির কথা বলছি -আমি সেই নেতার কথা বলছি
আমি আলো্কচিত্রাচার্য মঞ্জুর আলম বেগ স্যারের কথা বলছি
যিনি ছিলেন বিশ্ব স্বীকৃত এক শিক্ষক – সংগঠক সুকুমার আলোকচিত্র কবি
এবং এক ক্ষণজন্মা দেশপ্রেমিক মানবিক বাঙ্গালী
13 JUN 2021
………………………………………………………………………………………
© আবদুল মালেক বাবুল এফবিপিএস ,এফবিপিএস (সন্মান)
© Abdul Malek Babul FBPS , Hon FBPS
https://bimboophoto.com/ : 01715298747
* professional & fine art photo artist *teacher *organizer
*dream weaver * pictorial creator & documentary expert
*National and Internationally renowned leading photo artist
* Achieved more than thirty national & international awards
including Gold , Grand & First prizes along with
exhibited photographs in home and almost every continents
around the world
*published fine art photographs in different
prestigious international and national publications
*প্রাক্তন অধ্যক্ষ , বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক ইনস্টিটিউট (বিপিআই)
Former Principal of Bangladesh Photographic Institute BPI
*প্রাক্তন সহসভাপতি বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (বিপিএস)
Former vice president of Bangladesh Photographic Society BPs
*ফেলো এবং আজীবন সদস্য বাংলাদেশ ফটোগ্রাফিক সোসাইটি (বিপিএস
Fellow and Life member of Bangladesh Photographic Society BPS
*প্রাক্তন বেসামরিক কর্মকর্তা আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল সার্ভিসেস ঢাকা সেনানিবাস ,
Former defence officer (civil) Armed Forces Medical Services
DGMS Dhaka cantonment, Dhaka, Bangladesh
Archives
- May 2024
- April 2024
- November 2023
- August 2023
- January 2023
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- December 2021
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- September 2020
- August 2020
- July 2020
- June 2020
- May 2020
- April 2020
- March 2020
- September 2015
- June 2013
- June 2011
Categories
- abstract
- agriculture
- ancient dhaka
- animal
- architectural heritage
- architecture
- bangladesh
- banglapedia
- bird
- Black & White
- blog
- candid
- celebration
- Child Labour Bangladesh
- children bangladesh
- cityscape
- climate action
- climate change
- coastal area
- Colour
- colours
- comercial photography
- communication
- conceptual
- Contrast
- COVID 19
- COVID19
- creator
- cultural heritage
- decisive moment
- deforestation
- deforstation
- dhaka 500 years
- dhaka city
- Digital
- disable people
- documentary
- Drought
- dying river
- education
- education bangladesh
- environmental photo
- environmental pollution
- exhibition & shows
- experimental
- family
- Farmer Bangladesh
- Fashion photography
- Featured
- festival
- film photography
- fine art
- Fishing
- Flags
- flower
- folks
- framing and composition
- freedom
- fun photography
- global warming
- green banking
- handicrafts bangladesh
- health
- Heritage
- historical
- Humanity
- important personality
- independence
- indigenous community
- indigenous people
- industrial
- international days
- international issues
- Islands Bangladesh
- joy of photography
- Landscape
- liberation 1971
- liberation war monument
- Lifestyle
- Lockdown
- love and empathy
- market place
- movement – slow shutter
- national days
- natural disaster
- nature and landscape
- nature environment
- nature study
- night photography
- ocean and life
- parents and kids
- people
- people and planet
- photo journalism
- photo journalism
- Photography
- photomontage
- pictorial
- poem
- poet & writer
- pollution
- portrait photography
- post box
- Poverty
- profession
- protective mask
- Reflection
- religion
- reportage
- riv
- river and life
- River Breaking
- rivers of bangladesh
- road and traffic
- rural life
- sculpture – monument
- season
- skyscape
- social problems
- space
- sports and game
- still life photography
- story telling
- street photography
- street story
- sun rising
- sun setting
- surrealistic
- tourism
- transportation
- Travel
- Uncategorized
- urban life
- village hat/market
- water and life
- wikimedia common
- wikimedia monument
- wikipedia
- wild life
- woman
- working environment
- world days
- world heritage
- world problem
- write up
Meta
- A gray cat slinks past a wooden house. There’s something a little intimidating attempting to describe.