*একটি ব্রয়লার মুরগী – এক পাতিল দই ও
পাল্কি বিয়ের বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ !
folk and traditional delight in a
rural marriage ceremony bangladesh
………………………………………………………………………………………।।
আমার চার দশকেরও বেশী ফটোগ্রাফি জীবনে তোলা একমাত্র বিয়ের ছবি -যা আমি নিজের আবেগ এবং প্রবল অনুভুতির টানেই তুলেছিলাম ২০০৭ সালের মে মাসে – মুন্সীগঞ্জ জেলার দীঘির পাড় নামক এক অজ পাঁড়া গাঁয়ে এবং যে বিয়েতে মাইক বেজেছে, মেহেদী বাটা হয়েছে , রঙ খেলা হয়েছে ছেলে মেয়েদের বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দের জোয়ারে এবং যে বিয়েতে বর কনে পাল্কি চড়ে আসা যাত্তয়া করেছে এবং যে বিয়েতে এক পাতিল দই ও একটি ব্রয়লার মুরগী রান্না দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়েছিল ! আমি আর আমার অতি প্রিয় আউটিং সাথী কবির (সড়ক দুর্গঠনায় বর্তমানে প্রয়াত ) সারাদিন ওদের উঠোনে বসে তাদের সাথে বিয়ের আনন্দ উপভোগ করছিলাম এবং ছবি তুলছিলাম – এর মধ্যে রসিক বেহারা (পাল্কিওয়াল) মুকুল ভায়ের সাথে আলাপচারিতায় ঘনিষ্ঠ হয়েছিলাম এবং উনার সাথে তার পাল্কির আখড়ায় গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে উনার অনুরোধ রক্ষা করেছিলাম । তারপর আবার এসে বিয়ে বাড়ী বসলাম – বিকেলের দিকে মুকুল ভাই তার আরও তিন সাথীকে নিয়ে পাল্কি কাঁধে তুলে বর আনতে বেরিয়ে পড়লো এবং ছবি তুলতে তুলতে আমরাও তার সাথে ছুটলাম –
শেষ বিকেলের দিকে বর নিয়ে বেশ অনেক দুর চরের রাস্তা পাড়ি দিয়ে কনে বাড়ীতে এসে বর নেমেছে এবং এবার বিয়ের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শেষ করে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনার মধ্য দিয়ে কনেকে বিদায় দেবার পালা – চারিদিকে তখন বেশ অন্ধকার নেমে এসেছে- এর মধ্যে গ্রামের কিছু গন্যমান্য লোকও এসেছে যারা চাঁদা করে এ বিয়ের খরচ বহন করেছে -কনেকে পাল্কিতে তোলার আগে আমরা বালক জামাই ও বালিকা বধুর একসাথে ছবি তুললাম । এরি মধ্যে কনের মা বাবা এসে আমাদের বিশেষভাবে অনুরোধ শুরু করলো অন্তত এক কাপ দই যেন আমরা খাই -ওদের অবস্থার কথা ভেবে বার বার নিষেধ করলাম কিন্তু বারন করাতে পারলামনা- কবির কানে কানে বল্লো স্যার ওরা গরীব মানুষ একটু মুখে না দিলে মনে কষ্ট পাবে । সুতরাং …।। এরপর কনেকে বিদায় জানিয়ে আমরা অনেক আবেগ আর অভিজ্ঞতার স্বাক্ষী হয়ে ঢাকার পথে বেরিয়ে পড়লাম ।
প্রায় মাস দুয়েক পরে আবার তাদের সংসার দেখতে গেলাম – সাথে ১০বাই ১২ ইঞ্চি মাপের একটি রঙীন ছবি ফ্রেম করে নিয়ে গেলাম । চরের ভেতর অনেক রাস্তা পেরিয়ে অনেক খুঁজে তাদের বের করলাম কারন এরি মধ্যে তারা নতুন এক যায়গায় গিয়ে ঘর বেঁধেছ । গিয়ে দেখলাম ৬ ফিট বাই ৭ ফিট একটি মাটির দেয়াল ঘেরা ঘর- সে ঘরে সেই বালিকা বধু সোহেলী একাই রান্নার কাজ করছে- বালক জামাই কামরুল নৌকায় মাছ ধরতে গেছে – এটাই এখন পেশা ।
আমাকে দেখে মেয়েটি অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছো মেয়ে – মাথা নিচু করে বল্লো ভালো আছি । আমি ধীরে ধীরে খবরের কাগজের কভারটা খুলে ছবির ফ্রেমটা তার দিকে তুলে ধরলাম- তার চোখে মুখে ফুটে উঠলো অবারিত খুশির এক আধ্যত্মিক অনুভুতির মৃদু হাসি । খুব আর্শয হয়েই বল্লো অনেক সুন্দর হইছে স্যার । আমি শুধু অপলকে তার ছবি পাওয়ার আনন্দঘন মুহুর্তের আদিম শৈল্পিক অনুভুতির পরিবর্তন গুলো উপভোগ করছিলাম একান্ত আত্মভোলার মত । তার পর আবার আসবো বলে চরের পথে পা বাড়ালাম – কিছুদুর এসে পেছন ফিরে দেখলাম ছবিটি বুকে ভীষন ভাবে আঁকড়ে ধরে অপলকে দঁড়িয়ে আছে মেয়েটি ।
পরে আরও কয়েক বার গিয়েছি ছবি তুলেছি – তিন বাচ্ছার মা হয়ে এখন যৌবনে প্রৌড় অবয়ব !
সব ছবি গুলো সহ তার সংসার জীবন নিয়ে পরবর্তিতে একটি পুর্নাংগ লেখা লেখার ইচ্ছে আছে – আপাতত ।।
১৬ মে ২০২১
© আবদুল মালেক বাবুল এফবিপিএস ,এফবিপিএস (সন্মান)
© Abdul Malek Babul FBPS , Hon FBPS
https://bimboophoto.com/ : 01715298747
Md Saiful Amin, Pankaj Sikder and 17 others