# আবদুল মালেক বাবুল এফ বি পি এস – এফ বি পি এস (সম্মান)
…………………………………………………………………………….
যদি পৃথিবীটা হয় স্বর্গের এক সুন্দর বাগান শিশুরা সেখানে বিকাশমান ফুলকলি। সে কলি থেকে যদি প্রস্ফুটিত ফুল ও ফলের শোভায় আমরা এক জাগতিক স্বর্গ তৈরি করতে চাই- তাহলে শিশুদের মনো জগৎ আর দৃশ্য জগৎকেও এক শক্ত ভিত্তির উপর দাঢ় করিয়ে দিতে হবে।
একাজটা করার জন্য তাদেরকে দৃশ্যগত সৃজন শীলতা ও মনোজগতের চিন্তা ভাবনা সমন্বয়ে স্বপ্ন দেখার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার আগ্রহ তৈরী করে দিতে হবে। এটা করানোর জন্য বহু ধরনের ভিউজুয়াল বা দৃশ্যমান মাধ্যম বিদ্যমান। তবে এক্ষেত্রে আলোকচিত্র হচ্ছে একেবারেই অকৃত্রিম এক সহজ সরল যাদুকরি মাধ্যম যা শিশুদের কাদামাটিতুল্য মনোজগৎ ও দৃশ্যজগতকে ভেংগেচুরে সৃষ্টি করতে পারে নতুন ও ভিন্নধর্মী আর এক বিস্ময়কর নতুন জগৎ।
ফটোগ্রাফি একটি শিশুর জন্য শুধু মাত্র মজার শখ নয় বরং ফটোগ্রাফি তার চার পাশে ঘটে যাওয়া বিশেষ বিশেষ মুহুর্ত গুলোকে চিরজীবি করে আপনার শিশুর মানসিক ও শারিরীক স্বাস্থকে অটুট রাখবে। একটি সংস্থার ২০১৬ সালের জরিপে দেখা যায় যে প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে মাত্র ০৪ জন নিজেদের স্রষ্টা হিসেবে প্রমান করতে পেরেছে।এ সংখ্যা প্রতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাড়তে পারে যদি আমরা সৃজনশীলতাকে গুরুত্বের সাথে শিশুদের মনোজগতে লালন পালনে সহযোগিতা করতে উৎসাহী হই। কতিপয় বিশ্ব গবেষনায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে- কোনো দৃশ্যগত নিপুন শিল্প বিষয়ে শিক্ষা এবং চর্চা একজন শিশুর জন্য খুবই জরুরী। কেনো এটা জরুরী এবং প্রয়োজনীয় বিষয় তা আমরা সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি।
১। দৃশ্যগত যোগাযোগের মাধ্যমে বেড়ে ওঠাঃ একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৭ সালে ১.২ ট্রিলিয়নেরও বেশী চবি তোলা হয়েছে পৃথিবী ব্যাপী। সে হিসেবে মাথা পিছু গড়ে প্রায় ১৬০টি ছবি তোলা হয়েছে এক বছরে।
এ সংখ্যা ২০১৮ সালে এসে বিভিন্ন নতুন এ্যাপস যেমন – ইনস্টগ্রাম ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমকে প্রভাবিত করার ফলে এ সংখ্যা হয়েছে কল্পনাতীত। আবার এর সাথে যুক্ত হয়েছে নতুন এক দৈত্য যার নাম ইউটিউব এবং ব্যবহার কারীর সংখ্যাও প্রায় বিশ্বের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর এক তৃতীয়াংশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনি ধরনের সার্বজনীন নির্ভরতা দৃশ্যমান সৃজনশীল ইমেজের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছে এবং ফটোগ্রাফি হচ্ছে তার মূল জীবনী শক্তি বা সঞ্জীবনী সৃধা। বর্তমানে মাকেটিং বা পণ্য বাজারজাত করনের প্রক্রিয়ায় বিশ্ব এখন ডিজিটাল সাম্রাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে। সেই সা সাম্রাজ্যে স্থির চিত্র এবং ভিডিও বা চলচ্চিত্র এক সর্বময় ক্ষমতাশালী সম্রাট। কোন আলোকচিত্র বিহীন কনটেন্ট থেকে আলোকচিত্র সম্বলিত প্রচার কনটেন্ট বা বিষয়াবলী ৯০ শতাংশ বেশী ভিউ হয়। আলোকচিত্রে ভিডিও নির্ভরতায় এই নতুন অভিজ্ঞাতা আরও বেশী দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে।
সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে এই ইন্ডাষ্ট্রিতে যে প্রচুর পরিমানে সৃজনশীল লোকের ডাক পড়ছে এবং পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই বলতে দ্বিধা বা সংকোচ নেই যে আলোকচিত্র সেদিক থেকে অধিকতর একটি যাদুকরি এবং উপযোগি বিষয় যা মার্কেটিং পলিসির ভুবনে তৈরি করছে চাকুরীর এক উদার কর্ম ভান্ডার।
২। ফটোগ্রাফি মানে শুধু সাটার বোতাম চাপ দিয়ে একটি ছবি তোলা নয় – ফটোগ্রাফি হচ্ছে তার চেয়ে বহু বহু গুন অর্থপূর্ন একটি সরল কঠিন উপযোগিতায় ভরপুর একটি মাধ্যম। একটি সুন্দর নান্দনীক দৃশ্য শিল্প হিসেবে আলোকচিত্র শিশুদেরকে তার চারদিককার পরিবেশ-পরিস্থিতি এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থাকে অন্তর দৃষ্টি দিয়ে পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষন করতে শেখায়। যখন একটা শিশু ক্যামেরার ভিউফাইন্ডার/ফ্রেমে চোখ রেখে চবি তোলার চেষ্টা করবে সে তখন তার পারিপার্শ্বিক বিষয়বস্তু গুলোকে একটি ফ্রেমের মধ্য দিয়ে দেখতে থাকবে। এ সময় নতুন নতুন অনেক অনুভুতি ও ভাবনা অবচেতন মনেই তার মনোজগতে ঘুরপাক খেতে থাকবে- সে তখন তার পারিপার্শ্বিক পরিবেশ ও বিষয়বস্তু সম্বন্ধে আরও সচেতন হয়ে উঠবে এবং কোনটি সুন্দর আর কোনটি সুন্দর নয় সেই বোধটুকুও তার ভেতরে জাগ্রত হবে ।
এই পর্যবেক্ষন বা পর্যালোচনা বোধটুকু একজন শিশুকে দেখার সাহস যোগায়।ফলে সে ছবি তুলতে গিয়ে চিত্রায়িতব্য ফ্রেমে কোনটা থাকবে বা কোনটা থাকবেনা সে ব্যপারে দ্রুত সিদান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।
সুতরাং শখ হিসেবে ফটোগ্রাফি চর্চা একটা শিশুর মনোজগতকে সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে দৃশ্য জগতের প্রতি আরও বেশী আকৃষ্ট হতে অনুপ্রেরনা যোগায়। বৈজ্ঞানিক পরিক্ষা নীরিক্ষায় বিভিন্নভাবে প্রমানিত হয়েছে যে একজন শিশু যদি শৈশব থেকে যদি শিল্প কলার সাথে যুক্ত থাকে তাহলে সে অনেক বেশী দ্রুত প্রতিষ্ঠানিক জ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়। শিল্প একটা শিশুকে তার চতুর্পাশের বৈচিত্র সমারোহ পর্যবেক্ষন করতে মনোযোগী করে তোলে। এবং তার মানসচক্ষু ও আত্মবিশ্বাস প্রসারিত হয় । সৃজনশীল কর্মকান্ডে উচ্চতর আত্ম ধারনা একটি শিশুকে আত্ম প্রতিষ্ঠা লাভে সমৃদ্ধ বা পরিপূণ করে তোলো যা তাকে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে একটি বিস্ময়কর জীবনী শক্তি উপহার দেয়। প্রত্যেক কর্ম ক্ষেত্রেই একজন মানুষ অন্যদের চেয়ে আলাদা ভাবে গুরুত্ব পূর্ণ হয়ে ওঠে – যার সৃজনশীল চিন্তাশক্তি সমস্যা সমাধানে পারদর্শিতা দেখাতে সক্ষম সেইই হয়ে উঠে একজন সার্বজনীন উপযোগী ও সফল মানুষ।
ফটোগ্রাফি বা আলোকচিত্র অন্যান্য সব দৃশ্য শিল্পের মত একটি প্রতিফলিত স্বচ্ছ দেয়াল যেখানে সহজেই সৃজনশীলতার যাদু প্রদর্শন করা যায়।
শিল্প চর্চা শিশুদেরকে ভুল করার মধ্য দিয়ে কখনও কখনও ভালো কিছু শিখতে সাহায্য করে এবং কি ভাবে বিভিন্ন উপায় অবলম্বনের মাধ্যমে সমস্যা সমূহের সমাধান কল্পে সিদান্ত গ্রহন করা যায় সে ব্যপারে সাহসী করে তোলে। উদ্ভাবনী ধারনা এবং অনুভূতি সমূহ সংযোগের ক্ষেত্রে শিল্প কখনো কখনো পরিপূর্ণ একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে – যা চর্চা ও সাধনার মাধ্যমে অর্জিত হয়। ***
৩ । ফটোগ্রাফি হচ্ছে ছবির মাধ্যমে গল্প নির্মাণ বা বলার জন্য একটি সরল সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। একটি ছবি তোলার মধ্য দিয়ে আপনি প্রমান করতে পারেন কোন গল্পটি আপনি বলবেন আর কোনটি বলবেন না। ছবি ছাড়া কোন গল্প আপনি মুখে বা লিখে বলতে পারেন। ছবির মধ্যে দিয়ে ভিতরের সুখ দুঃখ বা সফলতা বা অসফলতার গল্প বিশ্বস্ততার সাথে উপস্থাপন করার কোন বিকল্প নাই। নান্দনিক রস বোধ এবং সৃজনশীল কল্পনা শক্তি গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরনা হতে পারে।
অপরদিকে ফটোগ্রাফি গল্প বলার মধ্যে দিয়ে একটি স্থিতিস্থাপক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আসার উৎস যোগায় এবং এটা কর্ম চাঞ্ছল্য বা কর্ম সম্পাদনের মধ্য দিয়ে নৈতিকতার রাজ্যে প্রবেশের একটি ধার বা দরজা খুলে দেয়। সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাপারটি হল শিল্প সৃষ্টি আপনাকে আপনার হ্নদয়ে নিগুঢ়তম ভালবাসার জন্ম দিয়ে কর্ম বিষয়ে অনুপ্রানিত করে। এর মধ্যে দিয়ে আপনার সৃষ্টি আপনাকে সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লাভের বাহিরে একজন ভিন্ন ধর্মী মানুষ হিসেবে সার্বজনীন পরিচিতি সম্প্রদান করে।
সুতরাং আপনার শিশু ছোট বেলা থেকে ক্যামেরা ফ্রেমের মাধ্যমে ফটোগ্রাফি চর্চা করতে থাকলে আর দশটা শিশুর চেয়ে আলাদা সৃজনশীল উদ্ভাবক হিসেবে সফলতা লাভ করবে। আলোকচিত্র মৃদু্মন্দ বাতাসের দোলায় শিশুদের মনকে দোলায়িত করাতে হবে। যাতে সে একজন পরিপুর্ন এবং উদ্ভাবনী শক্তি সম্পন্ন নান্দনিক মানুষ হয়ে উঠতে পারে।
****************