ক্যামেরা যখন রাইফেল when the camera is rifle

ক্যামেরা যখন রাইফেল
when the camera is rifle
আবদুল মালেক বাবুল
সময়কাল: ২০০৩ শাল
ক্যামেরা ! তুমি ফিল্ম অথবা সেনসর; ইমালশন
অথবা পিক্সেলের সাথে আলোর সংগমে
জন্ম দাও অজস্র শিশুর, আলোবিহীন
আতুঁড় ঘরে।
প্রযুক্তির বেড়াজাল ছিন্ন করে যা এক সময়
বেরিয়ে আসে লোকালয়ে; ধরনীকে করে
তোলে উত্তাল। প্রতিবাদের প্রলয় তোলে
দানবীয় সরোবরে।
তাইতো! তুমি কখনও গর্জে ওঠা রাইফেল!
কখনও আবার সৃষ্টি সূখের উল্লাসে
কাঁপা শিল্পী হ্নদয়ের বিস্ময়কর চাবি।
ক্যামেরা! তুমি বিশ্বের সচিত্র স্বচ্ছ আয়নার
একমাত্র রুপকার।
মানুষের উচ্চাস-সংগ্রাম আর
বীরত্ব গাঁথার ছবি এঁকে চলেছো
আলোর রেখায় অবিরাম……।
আবার আলোকচিত্রের স্বচ্ছ আয়নায় তুমি
প্রতিফলিত করেছো কুখ্যাত মীরজাফর
হিটলার, মুসোলিনি, ইয়াহিয়া, টিক্কা,
গোলাম আযম, নিজামী, শেরন, লাদেন আর
আজকের মহাপরাক্রমশালী জর্জ বুশদের
মত মানুষ খেকোদের বিভৎস মূত্তি।

সর্বাধুনীক মিশাইলের পিঠে চড়ে দু:সাহসী তুমি!
ছুটে চলছো বিরামহীন।
আফগান, ইরাক, প্যালেস্টাইন সিরিয়া সহ নির্যাতীত
বিশ্ব মানবতার চিত্র গাঁথা রচনায়।
যেমন তুমি ৭১ এ রচনা করেছিলে,
অগনিত বাঙ্গালীর লাশের ওপর দাঁড়িয়ে
পাক হায়েনা আর রাজাকারদের হিংস্রতার
হ্নদয় বিদারক চিত্রমালা! হয়েছিলে
বীর মুক্তিযোদ্ধার অসম সাহসী রাইফেল।
জহির রায়হানের স্টপ জেনোসাইড হয়ে
আঘাত হেনেছিলে বিশ্ববিবেকের মর্ম মুলে;
কাঁপিয়ে দিয়েছিলে দানবের মসনদ!
লাল সবুজ রং গায়ে মেখে অবিরাম ওড়ে
চলছো বাংলা মায়ের রক্তাক্ত বুকে।

তুমি পিকাসোর গোয়ের্নিকা হয়ে দেখেছো;
নাপামের আগ্নুপাতে রক্তলাল মন্ডে পরিনত
হওয়া হিরোসীমা নাগাসাকির
লক্ষ কোটি হ্নদয়ের বিভীষিকাময় আর্তনাদ !
তুমি! দেখেছো বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, বসনীয়া,
সোমালিয়া, ইরাক, প্যালেস্টাইন, আফগান আর
আফ্রিকার পোড়ামাটির বুকে পড়ে থাকা অজস্র
লাশের বুকে উন্মাতাল শকুনের উন্মাদ নৃত্যের অনন্ত স্বাক্ষী তুমি।
ইদানিং- তুমি ইরাকের আলগারীব বন্দীশালায়
বিকৃত কায়দায় অত্যাচারের সচিত্র কাহিনী
প্রকাশে ব্যস্ত….।

মহা গ্রন্ত্র আল-কোরআন অবমাননার সচিত্র
দলিল আজ তোমার কানে ভাসে বন্দী।
জঙ্গীবাদ আর আত্মঘাতী শয়তানের মুখোশ
উন্মোচনে তোমার আলো ছুটে বেড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে।

তুমি একদিকে যেমন অনুবাদ কর প্রকৃতির অনিন্দ
সুন্দর-রুপ আর নান্দনীকতা
আবার অন্যদিকে তুলে আনো সুনামী আর ভূকম্পোনের তান্ডবে
নিশ্চিন্ন জনপদের শোক গাঁথা
পূর্ণবার মনে করিয়ে দাও-মানুষ হতে।

ক্যামেরা! তোমার অন্ধকার গহŸরেই আবার
অভিষেক ঘঠেছে মার্কস , লেলিন
মাওসেতুঙ, চে গুয়েভারা, কামাল আতাতুর্ক,
টিটো, গান্ধী, ক্যাস্ট্রো, ম্যান্ডেলা, শেখ মুজিব
আর মহীয়সী মাদার তেরেসা-
নীপিড়িত মানব কুলের মুক্তির পথে যাঁরা বিস্পেরিত
ভালবাসার মূর্ত প্রতীক।

এত সব কান্ড করে! কাল থেকে মহাকালের ইতিহাস
গর্ভে ধরে। তুমি আর আমি আজ ভীষন ক্লান্ত!
তাইএসো এবার সুন্দরের কথা বলি-নান্দনীক
আগামীর কথা বলি-প্রগতির কথা বলি আর
গোলা বারুদের বদলে লাল গোলাপের কথা বলি।
প্রিয় ক্যামেরা ! তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যেতে চাই
শৈশবের উচ্চাস ভরা দুষ্টুমীতে; মায়ের
বকুনী খেয়ে আঁকা বাঁকা মেঠো পথে
দিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতির কোলে;
ভোরের ঝিলের জলে শালুক পদ্ম তোলা কিশোরীর অবয়বে;
দুর্বার মুষ্টিবদ্ধ শ্লোগানে –
তোমার আমার ঠিকানা -পদ্মা মেঘনা যমুনা ,
বালিকা বধুর অবগুন্ঠনের আড়ালের লাজ নম্র হাসিতে;
অথবা অশীতিপর বৃদ্ধের উল্লাসিত
মুখমন্ডলের বলি রেখায়।
অবশেষে তোমার আর্কাইভ থেকে চাইবো
তিনটি আন এক্সফোজ্ড ফ্রেম।
যার-একটিতে বিনস্ত হবে মহাজাগতিক
রহস্যের অনন্ত পদাবলী।
অপর ফ্রেম জুড়ে চিত্রিত হবে, বড় ক্লোজআপে
বিশ্ব শিশুকুলের হাঁসির বন্যায় কুসুমিত স্বপ্নের গল্প।
আর সর্বশেষ ফ্রেমটি হবে বিশ্ব প্রকৃতির শ্রেষ্ঠতম
নান্দনীক সুন্দরের পদাবলী;
যা আজও আমরা অনুবাদ করতে পারিনি;
বিকেলের কনে দেখা আলোর জোতির্ময় রেখায়।।